• কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  • আদর্শ সদর
  • বরুড়া
  • লাকসাম
  • দাউদকান্দি
  • আরও
    • চৌদ্দগ্রাম
    • সদর দক্ষিণ
    • নাঙ্গলকোট
    • বুড়িচং
    • ব্রাহ্মণপাড়া
    • মনোহরগঞ্জ
    • লালমাই
    • চান্দিনা
    • মুরাদনগর
    • দেবীদ্বার
    • হোমনা
    • মেঘনা
    • তিতাস
  • সর্বশেষ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • অপরাধ
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • মতামত
  • খেলা
  • বিনোদন
  • চাকরি
  • জীবনযাপন
  • ইপেপার
  • ইপেপার
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার শহর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. গাজীউল হক ভূঁইয়া ( সোহাগ)।

নাহার প্লাজা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০

ই-মেইল: [email protected]

ফোন: 01716197760

> বাংলাদেশ
> কুমিল্লা

৬৬ বছরে পল্লী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বার্ড

গাজীউল হক সোহাগ
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১১: ৫১
logo

৬৬ বছরে পল্লী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বার্ড

গাজীউল হক সোহাগ

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১১: ৫১
Photo

পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. আখতার হামিদ খান দুই মেয়াদে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তখন তিনি শ্রেণিকক্ষে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি দেখে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতেন। শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থ সামাজিক অবস্থা, ভগ্ন স্বাস্থ্য ও মলিন মুখ, ছেঁড়া জামা কাপড় , জুতাবিহীন পা ও অভাব অনটনের দৃশ্য দেখেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে পাকিস্তান সরকার কুমিল্লায় পাকিস্তান একাডেমি ফর ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে। ড. আখতার হামিদ খান কে তখন এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় পাকিস্তান একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট। যা বর্তমানে বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) নামে পরিচিতি। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বার্র্ডে প্রথমে কৃষক, রিকশাচালক ও মৃৎশিল্পীদের নিয়ে সমবায় সমিতি চালু করেন। এর মাধ্যমে পুঁজি গঠন করে নতুন নতুন কর্মসূচি নেওয়া হয়। কৃষি কাজে যন্ত্রপাতির ব্যবহার চালু করা হয়। বার্ডের উদ্ভাবিত এইসব কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করে প্রকল্প তৈরি করা হয়। এইসব প্রকল্প এখনও চলছে। ড. আখতার হামিদ খানের সহচর কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট সমবায়ী মো. সিরাজুল হক এভাবেই বার্ডের শুরুর দিকে গল্প তুলে ধরেন।

images

এদিকে বার্ডের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ মীর কাসেম বলেন, ষাটের দশকে ড. আখতার হামিদ খান কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ রামপুর এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে সভা করেন। তখন দেখতে পান ওই এলাকা নিঁচু। বছরে এক ঋতুতে ধান হয়। খরা ও শীত মৌসুমে মাঠে কোন ফসল নেই । তখন তিনি কৃষকদের নিয়ে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামের কৃষকই এতে চাঁদা দিয়ে সদস্য হন। পরে কৃষকদের জন্য তিনি গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচকাজ শুরু করেন। ম্যানিলা থেকে ইরি ধানের জাত আনেন। তখন ওই এলাকায় বছরে তিন ঋতুতে ধান উৎপাদন শুরু হল। ওই এলাকায় গভীর নলকূপ বসাতে গিয়ে ড. আখতার হামিদ খান একটি গোষ্ঠীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। তাঁরা বলেন,' আল্লাহ পানি দেন উপর (আকাশ) থেকে, মাটির নিচ থেকে পানি তোলা হবে কেমনে?' পরে ভালো ধান হওয়ার কারণে তাঁরাই খুশি হন। তাঁর উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি তখন পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই সারি করে ধানের চারা রোপন শুরু হয়। এখনও সেটি চলছে।

কেবল তাই নয়, আখতার হামিদ খান সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি আধুনিকায়নের লক্ষে উন্নত পদ্ধতির চাষাবাদ শুরু করেন। আদর্শ সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে দিদার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি করেন। সেখানে রিকশাচালকদের দিয়ে সমিতি করেন। ওই সমিতির সদস্য পরবর্তীতে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পান। সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে মৃৎশিল্পীদের জন্য সমবায় সমিতি করেন। বিজয়পুরের মৃৎশিল্প থেকে উৎপাদিত মাটির সামগ্রী এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। মূলত তিনি কুমিল্লা পদ্ধতির মাধ্যমে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করেন। এতে স্থানীয় সরকারের ধারনা তৈরি করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হয়। মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য মহিলা সমিতি গঠন করেন। ওই সমিতির সদস্য তাহেরা আবদুল্লাহও র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন। তিনিও সবার আগে এই পুরষ্কার পান।

পল্লী উন্নয়ন, সমবায় আন্দোলন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণায় কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ৬৬ বছর ধরে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। পল্লী উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরষ্কার ও জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদকে ভূষিত করেছে । বার্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনজন পেয়েছিলেন র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কারও। বার্ডের পরিচিতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এই নৈসর্গিক, মনোলোভা টিলাঘেরা ও গাছগাছালির অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ক্যাম্পাস দেখতে আসেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে বার্ড প্রতিষ্ঠাহয় । কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পাহাড় ও টিলাঘেরা কোটবাড়ি এলাকার ১৫৬ একর জমির উপর বার্ড প্রতিষ্ঠা হয় । ময়নামতি পাহাড়ের অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্যকে অটুট রেখে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে ও গ্রীক স্থাপত্যের আদলে ডাক্স এডিস ফার্মের নকশায় তৈরি হয় এখানকার ভবনগুলো। এখানকার এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যেতে কোন রোদ লাগে না। বৃষ্টি ও পড়ে না। পুরো ক্যাম্পাসের স্থাপনাই সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। ভবনগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে নানা দুলর্ভ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছও।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বার্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পল্লী উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) আইন ২০১৭ অনুসারে একাডেমির কাজ হচ্ছে। বার্ডের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ আছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। বার্ডের মহাপরিচালক হলেন প্রধান নির্বাহী। বর্তমানে বার্ডে একজন মহাপরিচালক, একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক, নয়জন পরিচালক ও ৫০ জন অনুষদ সদস্য আছে। বার্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্রে ৬৬ বছর যাবৎ তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে তথ্য প্রযুক্তি সফল প্রয়োগে বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি আরও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

বার্ড সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বার্ড উদ্ভাবিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন করছে। খ্যাতনামা এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রশাসনিক জনবলের পদ রয়েছে ৩৬৫ জন। কর্মরত আছেন ২৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২১৯ জন, নারী ৫৬ জন। শুন্য ৯০টি পদ।

২০১৬ সালের জুন মাসে সরকার লালমাই-ময়নামতি এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে ৫০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেয়। এর মাধ্যমে লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়ের পাদদেশের আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও বুড়িচং উপজেলার ১৩ হাজার ৫৯৭ টি পরিবার উপকৃত হচ্ছে। তাঁদের বার্ডের পক্ষ থেকে ২৯৩ টি সংগঠন করে। ৯ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জৈব সার, বীজ, ধান কাটা ও রোপনের যন্ত্র দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীনে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয় সাড়ে সাত কোটি, কম সুদে দেওয়া হয় ১১ কোটি। প্রকল্পের ২৯ জন মাঠকর্মীর চাকরিও স্থায়ী হন প্রকল্প থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে।

'বার্ডে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খানের নামেই নামকরণ করা হয়েছে বার্ড গ্রন্থাগারের। সেখানে বর্তমানে দেশি-বিদেশি অনেক দুর্লভ গ্রন্থসহ প্রায় ৭০ হাজার গ্রন্থ রয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে সাতটি হোস্টেলে ৩৯১ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। নতুন করে আরও হোস্টেল হচ্ছে। বার্ডের ও বাইরের মানুষের দিকে লক্ষ রেখে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় শিশু বিতান বার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। কয়েকবছর আগে ওই প্রতিষ্ঠানেই চালু করা হয় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান। ২০২০ সালে তিনতলা ভবন করে প্রতিষ্ঠা করা হয় বার্ড মডেল হাইস্কুল। এখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হচ্ছে। শিগগিরই চালু হচ্ছে কলেজ শাখা ।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ক্যাম্পাসের ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ। পুরো শান্ত পরিবেশ । নিরিবিল কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন ভবনে চলছে প্রশিক্ষণ কাজ। পুরো ক্যাম্পাস সবুজে ঘেরা। কাঁঠালের মৌ মৌ ঘ্রাণ।

বিজয়পুরের মৃৎশিল্প : ষাটের দশকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে 'প্রগতি' নামে একটি সংগঠন ছিল। তখন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও কুমিল্লা পদ্ধতির জনক ড. আখতার হামিদ খান ওই সংগঠনের আমন্ত্রণে সেখানে যান। তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তিনি হিন্দু অধ্যুষিত সাত গ্রামের পাল বংশের বাসিন্দাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন। এরপর তিনি ১৫ জন দিয়ে একটি সমিতি চালু করেন। সমিতির নাম দেওয়া হয় বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। শুরুতে সমিতির সদস্যরা ৫০ পয়সা চাঁদা দিয়ে সদস্য হন। একই সঙ্গে ১০ টাকা করে শেয়ার কেনেন। মোট ১৫৭ দশমিক ৫০ টাকা দিয়ে ওই সমিতির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের ২৯ আগস্ট এটি নিবন্ধিত হয় (রেজি. নং-৩৯)। উত্তর বিজয়পুরের প্রায় ৮৭ দশমিক ৫০ শতক জায়গা নিয়ে ওই সমিতি। ।

বার্ডের যত পুরষ্কার : বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান ১৯৬৩ সালে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৭৮ সালে বার্ডের মহিলা কর্মসূচির কর্মী তাহেরা আবদুল্লাহ ও ১৯৮৮ সালে বার্ডের অধিভুক্ত সমবায় প্রতিষ্ঠান দিদার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক পুলিশ সদস্য চা বিক্রেতা মো. ইয়াছিনও র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা পুরষ্কার ও ২০২১ সালে জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদকও পায় বার্ড।

বার্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও বার্ডের সাবেক যুগ্ম পরিচালক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বার্ডকে প্রশিক্ষণ কমিয়ে এখন গবেষণার দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। বার্ডে এখন গ্রামভিত্তিক কৃষি গবেষণা কম হচ্ছে। এটা বাড়াতে হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বার্ডকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দিতে হবে। বার্ডের জন্য একটি ফুলটাইম বোর্ড হওয়া দরকার । যাতে গ্রামকে শহরে রূপদানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেওয়া যায়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বার্ড নানা ধরনের প্রতিকূলতা মাড়িয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। পাকিস্তান আমলে বার্ড ছিল পল্লী উন্নয়নে এক ও অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। তখন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার কুমিল্লা ও পেশোয়ারে দুটি একাডেমি করে। কিন্তু ড. আখতার হামিদ খানের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের কারণে কুমিল্লার কোটবাড়ির বার্ড ভাল করে। তখন কুমিল্লা মডেল নাম করে। সেই সময়ের সরকার অন্তত ২৫টি সম্পূর্ণ ও খণ্ডিত কর্মসূচি এখান থেকে নেয়। বাংলাদেশ আমলের শুরুতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বার্ড ভূমিকা রাখে। তখন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগ বার্ডের সঙ্গে কাজ করতো। এখানকার উদ্ভাবিত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতো। এখন সেটি দেখা যায় না। বার্ডের গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি দিয়ে সেচ কাজ, কৃষি বিপ্লব, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি সম্প্রসারণ, সমবায় আন্দোলন, সমিতি করা, কৃষি ঋণ পল্লী শিক্ষা, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা, মহিলাদের নিয়ে কাজ করা, যুব কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা সবই আখতার হামিদ খানের সৃষ্টি।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, 'বার্ডের সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি ও ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের উন্নয়ন কর্মসূচি এখন জাতীয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। বার্ডকে ড. আখতার হামিদ খানের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বার্ডের তিনজন ব্যক্তি র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন।

বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমদ বলেন,'বার্ড আখতার হামিদ খানের অনন্য সৃষ্টি। এখানে নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা ধরনের গবেষণা করছে। বার্ডের উদ্ভাবিত নানা কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়। ৬৬ বছরে বার্ড এগিয়েছে অনেক দূর। এখন কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য সুন্দর পরিবেশ আছে বার্ডের। এর মনোলোভা সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।’

Thumbnail image

পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. আখতার হামিদ খান দুই মেয়াদে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তখন তিনি শ্রেণিকক্ষে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি দেখে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতেন। শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থ সামাজিক অবস্থা, ভগ্ন স্বাস্থ্য ও মলিন মুখ, ছেঁড়া জামা কাপড় , জুতাবিহীন পা ও অভাব অনটনের দৃশ্য দেখেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে পাকিস্তান সরকার কুমিল্লায় পাকিস্তান একাডেমি ফর ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে। ড. আখতার হামিদ খান কে তখন এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় পাকিস্তান একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট। যা বর্তমানে বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) নামে পরিচিতি। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বার্র্ডে প্রথমে কৃষক, রিকশাচালক ও মৃৎশিল্পীদের নিয়ে সমবায় সমিতি চালু করেন। এর মাধ্যমে পুঁজি গঠন করে নতুন নতুন কর্মসূচি নেওয়া হয়। কৃষি কাজে যন্ত্রপাতির ব্যবহার চালু করা হয়। বার্ডের উদ্ভাবিত এইসব কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করে প্রকল্প তৈরি করা হয়। এইসব প্রকল্প এখনও চলছে। ড. আখতার হামিদ খানের সহচর কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট সমবায়ী মো. সিরাজুল হক এভাবেই বার্ডের শুরুর দিকে গল্প তুলে ধরেন।

images

এদিকে বার্ডের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ মীর কাসেম বলেন, ষাটের দশকে ড. আখতার হামিদ খান কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ রামপুর এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে সভা করেন। তখন দেখতে পান ওই এলাকা নিঁচু। বছরে এক ঋতুতে ধান হয়। খরা ও শীত মৌসুমে মাঠে কোন ফসল নেই । তখন তিনি কৃষকদের নিয়ে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামের কৃষকই এতে চাঁদা দিয়ে সদস্য হন। পরে কৃষকদের জন্য তিনি গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচকাজ শুরু করেন। ম্যানিলা থেকে ইরি ধানের জাত আনেন। তখন ওই এলাকায় বছরে তিন ঋতুতে ধান উৎপাদন শুরু হল। ওই এলাকায় গভীর নলকূপ বসাতে গিয়ে ড. আখতার হামিদ খান একটি গোষ্ঠীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। তাঁরা বলেন,' আল্লাহ পানি দেন উপর (আকাশ) থেকে, মাটির নিচ থেকে পানি তোলা হবে কেমনে?' পরে ভালো ধান হওয়ার কারণে তাঁরাই খুশি হন। তাঁর উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি তখন পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই সারি করে ধানের চারা রোপন শুরু হয়। এখনও সেটি চলছে।

কেবল তাই নয়, আখতার হামিদ খান সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি আধুনিকায়নের লক্ষে উন্নত পদ্ধতির চাষাবাদ শুরু করেন। আদর্শ সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে দিদার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি করেন। সেখানে রিকশাচালকদের দিয়ে সমিতি করেন। ওই সমিতির সদস্য পরবর্তীতে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পান। সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে মৃৎশিল্পীদের জন্য সমবায় সমিতি করেন। বিজয়পুরের মৃৎশিল্প থেকে উৎপাদিত মাটির সামগ্রী এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। মূলত তিনি কুমিল্লা পদ্ধতির মাধ্যমে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করেন। এতে স্থানীয় সরকারের ধারনা তৈরি করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হয়। মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য মহিলা সমিতি গঠন করেন। ওই সমিতির সদস্য তাহেরা আবদুল্লাহও র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন। তিনিও সবার আগে এই পুরষ্কার পান।

পল্লী উন্নয়ন, সমবায় আন্দোলন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণায় কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ৬৬ বছর ধরে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। পল্লী উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরষ্কার ও জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদকে ভূষিত করেছে । বার্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনজন পেয়েছিলেন র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কারও। বার্ডের পরিচিতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এই নৈসর্গিক, মনোলোভা টিলাঘেরা ও গাছগাছালির অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ক্যাম্পাস দেখতে আসেন। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে বার্ড প্রতিষ্ঠাহয় । কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পাহাড় ও টিলাঘেরা কোটবাড়ি এলাকার ১৫৬ একর জমির উপর বার্ড প্রতিষ্ঠা হয় । ময়নামতি পাহাড়ের অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্যকে অটুট রেখে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে ও গ্রীক স্থাপত্যের আদলে ডাক্স এডিস ফার্মের নকশায় তৈরি হয় এখানকার ভবনগুলো। এখানকার এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যেতে কোন রোদ লাগে না। বৃষ্টি ও পড়ে না। পুরো ক্যাম্পাসের স্থাপনাই সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। ভবনগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে নানা দুলর্ভ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছও।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বার্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পল্লী উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) আইন ২০১৭ অনুসারে একাডেমির কাজ হচ্ছে। বার্ডের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ আছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। বার্ডের মহাপরিচালক হলেন প্রধান নির্বাহী। বর্তমানে বার্ডে একজন মহাপরিচালক, একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক, নয়জন পরিচালক ও ৫০ জন অনুষদ সদস্য আছে। বার্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্রে ৬৬ বছর যাবৎ তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে তথ্য প্রযুক্তি সফল প্রয়োগে বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি আরও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

বার্ড সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বার্ড উদ্ভাবিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন করছে। খ্যাতনামা এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রশাসনিক জনবলের পদ রয়েছে ৩৬৫ জন। কর্মরত আছেন ২৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২১৯ জন, নারী ৫৬ জন। শুন্য ৯০টি পদ।

২০১৬ সালের জুন মাসে সরকার লালমাই-ময়নামতি এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে ৫০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেয়। এর মাধ্যমে লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়ের পাদদেশের আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও বুড়িচং উপজেলার ১৩ হাজার ৫৯৭ টি পরিবার উপকৃত হচ্ছে। তাঁদের বার্ডের পক্ষ থেকে ২৯৩ টি সংগঠন করে। ৯ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জৈব সার, বীজ, ধান কাটা ও রোপনের যন্ত্র দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীনে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয় সাড়ে সাত কোটি, কম সুদে দেওয়া হয় ১১ কোটি। প্রকল্পের ২৯ জন মাঠকর্মীর চাকরিও স্থায়ী হন প্রকল্প থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে।

'বার্ডে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খানের নামেই নামকরণ করা হয়েছে বার্ড গ্রন্থাগারের। সেখানে বর্তমানে দেশি-বিদেশি অনেক দুর্লভ গ্রন্থসহ প্রায় ৭০ হাজার গ্রন্থ রয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে সাতটি হোস্টেলে ৩৯১ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। নতুন করে আরও হোস্টেল হচ্ছে। বার্ডের ও বাইরের মানুষের দিকে লক্ষ রেখে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় শিশু বিতান বার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। কয়েকবছর আগে ওই প্রতিষ্ঠানেই চালু করা হয় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান। ২০২০ সালে তিনতলা ভবন করে প্রতিষ্ঠা করা হয় বার্ড মডেল হাইস্কুল। এখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হচ্ছে। শিগগিরই চালু হচ্ছে কলেজ শাখা ।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ক্যাম্পাসের ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ। পুরো শান্ত পরিবেশ । নিরিবিল কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন ভবনে চলছে প্রশিক্ষণ কাজ। পুরো ক্যাম্পাস সবুজে ঘেরা। কাঁঠালের মৌ মৌ ঘ্রাণ।

বিজয়পুরের মৃৎশিল্প : ষাটের দশকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে 'প্রগতি' নামে একটি সংগঠন ছিল। তখন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও কুমিল্লা পদ্ধতির জনক ড. আখতার হামিদ খান ওই সংগঠনের আমন্ত্রণে সেখানে যান। তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তিনি হিন্দু অধ্যুষিত সাত গ্রামের পাল বংশের বাসিন্দাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন। এরপর তিনি ১৫ জন দিয়ে একটি সমিতি চালু করেন। সমিতির নাম দেওয়া হয় বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। শুরুতে সমিতির সদস্যরা ৫০ পয়সা চাঁদা দিয়ে সদস্য হন। একই সঙ্গে ১০ টাকা করে শেয়ার কেনেন। মোট ১৫৭ দশমিক ৫০ টাকা দিয়ে ওই সমিতির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের ২৯ আগস্ট এটি নিবন্ধিত হয় (রেজি. নং-৩৯)। উত্তর বিজয়পুরের প্রায় ৮৭ দশমিক ৫০ শতক জায়গা নিয়ে ওই সমিতি। ।

বার্ডের যত পুরষ্কার : বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান ১৯৬৩ সালে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৭৮ সালে বার্ডের মহিলা কর্মসূচির কর্মী তাহেরা আবদুল্লাহ ও ১৯৮৮ সালে বার্ডের অধিভুক্ত সমবায় প্রতিষ্ঠান দিদার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক পুলিশ সদস্য চা বিক্রেতা মো. ইয়াছিনও র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা পুরষ্কার ও ২০২১ সালে জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদকও পায় বার্ড।

বার্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও বার্ডের সাবেক যুগ্ম পরিচালক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বার্ডকে প্রশিক্ষণ কমিয়ে এখন গবেষণার দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। বার্ডে এখন গ্রামভিত্তিক কৃষি গবেষণা কম হচ্ছে। এটা বাড়াতে হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বার্ডকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দিতে হবে। বার্ডের জন্য একটি ফুলটাইম বোর্ড হওয়া দরকার । যাতে গ্রামকে শহরে রূপদানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেওয়া যায়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বার্ড নানা ধরনের প্রতিকূলতা মাড়িয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। পাকিস্তান আমলে বার্ড ছিল পল্লী উন্নয়নে এক ও অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। তখন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার কুমিল্লা ও পেশোয়ারে দুটি একাডেমি করে। কিন্তু ড. আখতার হামিদ খানের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের কারণে কুমিল্লার কোটবাড়ির বার্ড ভাল করে। তখন কুমিল্লা মডেল নাম করে। সেই সময়ের সরকার অন্তত ২৫টি সম্পূর্ণ ও খণ্ডিত কর্মসূচি এখান থেকে নেয়। বাংলাদেশ আমলের শুরুতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বার্ড ভূমিকা রাখে। তখন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগ বার্ডের সঙ্গে কাজ করতো। এখানকার উদ্ভাবিত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতো। এখন সেটি দেখা যায় না। বার্ডের গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি দিয়ে সেচ কাজ, কৃষি বিপ্লব, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি সম্প্রসারণ, সমবায় আন্দোলন, সমিতি করা, কৃষি ঋণ পল্লী শিক্ষা, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা, মহিলাদের নিয়ে কাজ করা, যুব কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা সবই আখতার হামিদ খানের সৃষ্টি।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, 'বার্ডের সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি ও ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের উন্নয়ন কর্মসূচি এখন জাতীয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। বার্ডকে ড. আখতার হামিদ খানের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বার্ডের তিনজন ব্যক্তি র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার পেয়েছেন।

বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমদ বলেন,'বার্ড আখতার হামিদ খানের অনন্য সৃষ্টি। এখানে নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা ধরনের গবেষণা করছে। বার্ডের উদ্ভাবিত নানা কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়। ৬৬ বছরে বার্ড এগিয়েছে অনেক দূর। এখন কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য সুন্দর পরিবেশ আছে বার্ডের। এর মনোলোভা সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।’

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১

কুমিল্লার মহাসড়কে যানবাহনের চাপে ভোগান্তি

২

সব চাকরিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক চায় ইসি

৩

নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে কুমিল্লায় আপেল মাহমুদ

৪

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা নিয়ে বাজেটে নতুন সিদ্ধান্ত

৫

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে ও কমতে পারে

সম্পর্কিত

কুমিল্লার মহাসড়কে যানবাহনের চাপে ভোগান্তি

কুমিল্লার মহাসড়কে যানবাহনের চাপে ভোগান্তি

১ দিন আগে
সব চাকরিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক চায় ইসি

সব চাকরিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক চায় ইসি

এছাড়া আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে নবম দেশ হিসেবে জাপান প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তভুক্তির কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

২ দিন আগে
নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে কুমিল্লায় আপেল মাহমুদ

নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে কুমিল্লায় আপেল মাহমুদ

৩ দিন আগে
প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা নিয়ে বাজেটে নতুন সিদ্ধান্ত

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা নিয়ে বাজেটে নতুন সিদ্ধান্ত

৩ দিন আগে