তৈয়বুর রহমান সোহেল
অবসর সময়ে বই পড়তে পছন্দ করেন সুলতানা আক্তার। সম্প্রতি ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়ায় অবস্থিত এশিয়া এয়ারকন বাস লাইনের কাউন্টারে বসে ছিলেন কুমিল্লা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক এই ফিজিওথেরাপিস্ট। হঠাৎ কাউন্টারের এক কোণে ছোট একটি লাইব্রেরির সন্ধান পান তিনি। আর এতেই তার চোখেমুখে আনন্দ ফুটে ওঠে। তাৎক্ষণিক বই নিয়ে বসে যান তিনি। বই পড়ার সময় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার।
সুলতানা জানান, বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। ঢাকা বা অন্যান্য স্থানে যাত্রাপথে আগেভাগে কাউন্টারে আসা হয়। কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বিরক্তি লাগে, সময় কাটতে চায় না। এই বাস কাউন্টার লাইব্রেরির কারণে এখন থেকে আর বিরক্তিকর সময় কাটাতে হবে না।
কুমিল্লা জেলা বাস-মিনিবাস সমিতির সহসভাপতি নাজমুল শামিম জানান, আমার বাসায়ও বড় লাইব্রেরি আছে। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে জাঙ্গালিয়ায় বেশি সময় কাটাতে হয়। এই সময় কাটানোর ফাঁকে বই নিয়ে বসে পড়ি। এই সুযোগটি তৈরি হয়েছে বাস কাউন্টার লাইব্রেরির কারণে।
এশিয়া এয়ারকন জাঙ্গালিয়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল যাত্রীদের জন্য একটা লাইব্রেরি করার। কিন্তু সে সুযোগ হয়ে উঠছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা এখানে লাইব্রেরি করার প্রস্তাব করে। আমরা সুযোগটা লুফে নিই। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। যাত্রীরা এখানে বেশ আনন্দ নিয়ে বই ও পত্রিকা পড়েন।
শুধু বাস কাউন্টার লাইব্রেরি নয়, কুমিল্লাতে সাতটি সেলুন লাইব্রেরি করেছে আলোকিত বজ্রপুর সংগঠন। লাইব্রেরি করেছেন হাসপাতালেও। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই কুমিল্লা নগরের বজ্রপুর এলাকার আবির জেন্টস পারলারে প্রথম সেলুন লাইব্রেরি করা হয়। ওই বছরের ৯ নভেম্বর নগরের কান্দিরপাড় সমবায় বিপণিবিতানের দোতলায় লাভলক সেলুনে আরেকটি লাইব্রেরি করা হয়। ১৮ নভেম্বর নগরের হাউজিং এস্টেট গোল মার্কেটে এবং রেসকোর্স এলাকার ময়নামতি মার্কেটে দুটি সেলুন লাইব্রেরি করা হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে নগরের ছাতিপট্টির হি হেয়ার কাটিং সেলুন, গাংচরের স্মার্ট হেয়ার কাটিং সেলুন ও ঠাকুরপাড়ার জিপিসি হেয়ার কাটিং সেলুনে লাইব্রেরি স্থাপন করে আলোকিত বজ্রপুর সংগঠন। এসব লাইব্রেরি স্থাপনের পর কুমিল্লায় বই পড়া নিয়ে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি ঠাকুরপাড়ার জিপিসি হেয়ার কাটিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, চুল কাটার জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তিরা বই পড়ছেন। কেউ নিজেদের বাচ্চাদের চুল কাটানোর ফাঁকে বই নিয়ে ডুবে আছেন।
রীণা দাস নামে এক পাঠক জানান, ছেলেকে নিয়ে সেলুনে এসেছি। টেবিলের পাশে কিছু বই দেখতে পেয়েছি। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি তাকে সাজানো আরো কিছু বই। এখন বই পড়ে ভালো সময় কাটছে।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক পাঠক জানান, সেলুনে আসলে আর অলস বসে থাকতে হয় না। এই উদ্যোগটি অসাধারণ।
ওই সেলুনের স্বত্বাধিকারী শিবু দাস বলেন, সেলুনে মানুষের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস পুরোনো। এই লাইব্রেরি করার পর মানুষের মধ্যে একরকম জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সেলুনে কাস্টমার বেড়েছে। তারা বই পড়ে যথাস্থানে রেখে যান।
আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের অন্যতম সংগঠক রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমি ক্রীড়া সংগঠক ছিলাম। দুর্ঘটনায় আপতিত হয়ে আমার মেরুরুজ্জ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাকে হুইল চেয়ারে বসেই কাজ করতে হয়। হুইল চেয়ার নিয়ে ঘর থেকে বের হতে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায় আলোকিত বজ্রপুর সংগঠন। এই সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদ রানা চৌধুরী। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর, সুমন ও রুবেল পাল সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমাকে সম্পৃক্ত রেখে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেন। কুমিল্লা নগরীতে আগে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার ছিল। এটা হারিয়ে যেতে বসেছে। শিক্ষা সংস্কৃতির এই নগরীর সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে তাই আমরা পাঠাগার সেলুন চালু করি। ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার, সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বোলিং কোচ মাহবুব আলী জাকি, গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক ব্যক্তিগতভাবে আমাকে উজ্জীবিত করেন।
কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক ও আলোকিত বজ্রপুর সংগঠক আহসানুল কবীর বলেন, এসব লাইব্রেরির পাশাপাশি আমরা মানবতার দেয়ালের মতো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি করতে চাই। ওই লাইব্রেরিতে সবধরনের বই থাকবে। দেয়ালে লেখা থাকবে, ‘বই পড়ুন, বই নিন। আপনাদের কাছে বাড়তি বই থাকলে রেখে যান।’ এ কাজটা চ্যালেঞ্জিং, তবে অসম্ভব নয়। কুমিল্লা নগরীর ইউসুফ হাইস্কুল থেকে আমরা এ কাজ শুরু করতে চাই।
আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ও পরিকল্পনামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ রানা চৌধুরী বলেন, আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। এসব পাঠাগার দেখলে অনেকে উজ্জীবিত হবেন। তারা নিজেরাও এলাকায় পাঠাগার সৃষ্টি করবেন। কুমিল্লার হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও প্রচুর লোক সমাগম হয়। তারা অলস ও বিরক্তিকর সময় কাটান। আমরা কিছু হাসপাতালের সাথে কথা বলেছি। অনুমতি পেলে ওইসব হাসপাতালেও পাঠাগার করা হবে। কুমিল্লা থেকে এই বড়া পড়ার আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।
অবসর সময়ে বই পড়তে পছন্দ করেন সুলতানা আক্তার। সম্প্রতি ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়ায় অবস্থিত এশিয়া এয়ারকন বাস লাইনের কাউন্টারে বসে ছিলেন কুমিল্লা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক এই ফিজিওথেরাপিস্ট। হঠাৎ কাউন্টারের এক কোণে ছোট একটি লাইব্রেরির সন্ধান পান তিনি। আর এতেই তার চোখেমুখে আনন্দ ফুটে ওঠে। তাৎক্ষণিক বই নিয়ে বসে যান তিনি। বই পড়ার সময় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার।
সুলতানা জানান, বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। ঢাকা বা অন্যান্য স্থানে যাত্রাপথে আগেভাগে কাউন্টারে আসা হয়। কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বিরক্তি লাগে, সময় কাটতে চায় না। এই বাস কাউন্টার লাইব্রেরির কারণে এখন থেকে আর বিরক্তিকর সময় কাটাতে হবে না।
কুমিল্লা জেলা বাস-মিনিবাস সমিতির সহসভাপতি নাজমুল শামিম জানান, আমার বাসায়ও বড় লাইব্রেরি আছে। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে জাঙ্গালিয়ায় বেশি সময় কাটাতে হয়। এই সময় কাটানোর ফাঁকে বই নিয়ে বসে পড়ি। এই সুযোগটি তৈরি হয়েছে বাস কাউন্টার লাইব্রেরির কারণে।
এশিয়া এয়ারকন জাঙ্গালিয়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল যাত্রীদের জন্য একটা লাইব্রেরি করার। কিন্তু সে সুযোগ হয়ে উঠছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা এখানে লাইব্রেরি করার প্রস্তাব করে। আমরা সুযোগটা লুফে নিই। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। যাত্রীরা এখানে বেশ আনন্দ নিয়ে বই ও পত্রিকা পড়েন।
শুধু বাস কাউন্টার লাইব্রেরি নয়, কুমিল্লাতে সাতটি সেলুন লাইব্রেরি করেছে আলোকিত বজ্রপুর সংগঠন। লাইব্রেরি করেছেন হাসপাতালেও। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই কুমিল্লা নগরের বজ্রপুর এলাকার আবির জেন্টস পারলারে প্রথম সেলুন লাইব্রেরি করা হয়। ওই বছরের ৯ নভেম্বর নগরের কান্দিরপাড় সমবায় বিপণিবিতানের দোতলায় লাভলক সেলুনে আরেকটি লাইব্রেরি করা হয়। ১৮ নভেম্বর নগরের হাউজিং এস্টেট গোল মার্কেটে এবং রেসকোর্স এলাকার ময়নামতি মার্কেটে দুটি সেলুন লাইব্রেরি করা হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে নগরের ছাতিপট্টির হি হেয়ার কাটিং সেলুন, গাংচরের স্মার্ট হেয়ার কাটিং সেলুন ও ঠাকুরপাড়ার জিপিসি হেয়ার কাটিং সেলুনে লাইব্রেরি স্থাপন করে আলোকিত বজ্রপুর সংগঠন। এসব লাইব্রেরি স্থাপনের পর কুমিল্লায় বই পড়া নিয়ে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি ঠাকুরপাড়ার জিপিসি হেয়ার কাটিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, চুল কাটার জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তিরা বই পড়ছেন। কেউ নিজেদের বাচ্চাদের চুল কাটানোর ফাঁকে বই নিয়ে ডুবে আছেন।
রীণা দাস নামে এক পাঠক জানান, ছেলেকে নিয়ে সেলুনে এসেছি। টেবিলের পাশে কিছু বই দেখতে পেয়েছি। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি তাকে সাজানো আরো কিছু বই। এখন বই পড়ে ভালো সময় কাটছে।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক পাঠক জানান, সেলুনে আসলে আর অলস বসে থাকতে হয় না। এই উদ্যোগটি অসাধারণ।
ওই সেলুনের স্বত্বাধিকারী শিবু দাস বলেন, সেলুনে মানুষের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস পুরোনো। এই লাইব্রেরি করার পর মানুষের মধ্যে একরকম জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সেলুনে কাস্টমার বেড়েছে। তারা বই পড়ে যথাস্থানে রেখে যান।
আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের অন্যতম সংগঠক রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমি ক্রীড়া সংগঠক ছিলাম। দুর্ঘটনায় আপতিত হয়ে আমার মেরুরুজ্জ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাকে হুইল চেয়ারে বসেই কাজ করতে হয়। হুইল চেয়ার নিয়ে ঘর থেকে বের হতে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায় আলোকিত বজ্রপুর সংগঠন। এই সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদ রানা চৌধুরী। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর, সুমন ও রুবেল পাল সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমাকে সম্পৃক্ত রেখে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেন। কুমিল্লা নগরীতে আগে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার ছিল। এটা হারিয়ে যেতে বসেছে। শিক্ষা সংস্কৃতির এই নগরীর সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে তাই আমরা পাঠাগার সেলুন চালু করি। ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার, সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বোলিং কোচ মাহবুব আলী জাকি, গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক ব্যক্তিগতভাবে আমাকে উজ্জীবিত করেন।
কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক ও আলোকিত বজ্রপুর সংগঠক আহসানুল কবীর বলেন, এসব লাইব্রেরির পাশাপাশি আমরা মানবতার দেয়ালের মতো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি করতে চাই। ওই লাইব্রেরিতে সবধরনের বই থাকবে। দেয়ালে লেখা থাকবে, ‘বই পড়ুন, বই নিন। আপনাদের কাছে বাড়তি বই থাকলে রেখে যান।’ এ কাজটা চ্যালেঞ্জিং, তবে অসম্ভব নয়। কুমিল্লা নগরীর ইউসুফ হাইস্কুল থেকে আমরা এ কাজ শুরু করতে চাই।
আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ও পরিকল্পনামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ রানা চৌধুরী বলেন, আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। এসব পাঠাগার দেখলে অনেকে উজ্জীবিত হবেন। তারা নিজেরাও এলাকায় পাঠাগার সৃষ্টি করবেন। কুমিল্লার হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও প্রচুর লোক সমাগম হয়। তারা অলস ও বিরক্তিকর সময় কাটান। আমরা কিছু হাসপাতালের সাথে কথা বলেছি। অনুমতি পেলে ওইসব হাসপাতালেও পাঠাগার করা হবে। কুমিল্লা থেকে এই বড়া পড়ার আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।