চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে একটি কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে ইউজিসি এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন
সাতটি সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। নিয়মিত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া, সময়মতো ফল প্রকাশ, সেশনজট কমানোসহ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় আট বছর আগে এসব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনা হয়েছিল। কিন্তু আট বছরেও সব সমস্যার সমাধান হয়নি। শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ‘অবহেলা’র অভিযোগও সামনে এসেছে।
এখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না।
সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে সমস্যা সমাধানে নানা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ তিন মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা আবারও আন্দোলনে নামেন। এই আন্দোলনের মধ্যেই প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই সাত কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই পুরোপুরি আলাদা একটি ব্যবস্থা থাকবে; কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। পরে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাত কলেজের জন্য একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর এ নিয়ে কাজ শুরু করে ইউজিসি।
শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ‘অবহেলা’র অভিযোগও সামনে এসেছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাঁরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এখন এটি আরও ত্বরান্বিত করবেন।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়টি কেমন হবে, সেটির বিভিন্ন বিকল্প বা ‘মডেল’ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনো মডেল চূড়ান্ত হয়নি। একই ধরনের কথা বলেছেন ইউজিসির বৈঠকে অংশ নেওয়া সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজের একজন ছাত্র।
আরও পড়ুন
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর গত বছরের এপ্রিলে আরও ৯টি সরকারি কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আটকে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পর আট বছরে ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোই পুঞ্জীভূত হয়ে বড় রূপ নিয়েছে।
এই সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজ। এই কলেজের সাবেক একজন অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনার পর দীর্ঘ প্রায় আট বছর হয়ে গেল। তাহলে এই আট বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করল? বাস্তবতা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়েছে। কখনো কখনো তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করা হয়েছে। তিনি অধ্যক্ষ থাকার সময়ে আলোচনা হয়েছিল এই সাত কলেজের দেখভালে একজন সহ-উপাচার্য থাকবেন, সুনির্দিষ্ট অফিস থাকবে, কিন্তু সেগুলো ঠিকমতো হয়নি।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়টি কেমন হবে, সেটির বিভিন্ন বিকল্প বা ‘মডেল’ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনো মডেল চূড়ান্ত হয়নি।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার জন্য বিভাগভিত্তিক গুণগত মানের শিক্ষকের অভাব আছে। আবার শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকসংকট রয়েছে। একেকটি বিভাগে কয়েক শ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৮ থেকে ৯ জন করে শিক্ষক। কিছু কলেজে বিভাগ অনুযায়ী তা আরও কম। আবার সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষা দেরিতে নেওয়া হয়, আবার ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়। তাঁরা পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। শ্রেণিকক্ষের সংকটসহ অন্যান্য সংকটও রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। ভালো মানের লাইব্রেরি কম। আবার কখনো কখনো সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষ না করেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি থাকলেও এই সাত কলেজে বর্ষভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়নের সম্মানীসহ নানা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কলেজগুলোর শিক্ষকদেরও কিছু অভিযোগ আছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গেই খারাপ আচরণ করে, সেখানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। তাই এই সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় কবে হবে, সেই ঘোষণার আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসন দিয়ে এই সাত কলেজ চালাতে হবে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ থাকতে পারবেন না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষা দেরিতে নেওয়া হয়, আবার ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়। তাঁরা পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। শ্রেণিকক্ষের সংকটসহ অন্যান্য সংকটও রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। ভালো মানের লাইব্রেরি কম।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর আগের চেয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতিও হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকার সময়ে স্বল্প সংখ্যক ক্লাস করেও পরীক্ষা দেওয়া যেত, সেখানে এখন পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই কেবল এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এই সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতায় ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এই সাত কলেজের বিষয়ে সম্মানজনক সুরাহা হোক। এটা সবাই চান। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি সবার জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে একটি কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে ইউজিসি এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন
সাতটি সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। নিয়মিত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া, সময়মতো ফল প্রকাশ, সেশনজট কমানোসহ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় আট বছর আগে এসব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনা হয়েছিল। কিন্তু আট বছরেও সব সমস্যার সমাধান হয়নি। শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ‘অবহেলা’র অভিযোগও সামনে এসেছে।
এখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না।
সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে সমস্যা সমাধানে নানা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ তিন মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা আবারও আন্দোলনে নামেন। এই আন্দোলনের মধ্যেই প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই সাত কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই পুরোপুরি আলাদা একটি ব্যবস্থা থাকবে; কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। পরে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাত কলেজের জন্য একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর এ নিয়ে কাজ শুরু করে ইউজিসি।
শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ‘অবহেলা’র অভিযোগও সামনে এসেছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাঁরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এখন এটি আরও ত্বরান্বিত করবেন।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়টি কেমন হবে, সেটির বিভিন্ন বিকল্প বা ‘মডেল’ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনো মডেল চূড়ান্ত হয়নি। একই ধরনের কথা বলেছেন ইউজিসির বৈঠকে অংশ নেওয়া সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজের একজন ছাত্র।
আরও পড়ুন
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর গত বছরের এপ্রিলে আরও ৯টি সরকারি কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আটকে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পর আট বছরে ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোই পুঞ্জীভূত হয়ে বড় রূপ নিয়েছে।
এই সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজ। এই কলেজের সাবেক একজন অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনার পর দীর্ঘ প্রায় আট বছর হয়ে গেল। তাহলে এই আট বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করল? বাস্তবতা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়েছে। কখনো কখনো তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করা হয়েছে। তিনি অধ্যক্ষ থাকার সময়ে আলোচনা হয়েছিল এই সাত কলেজের দেখভালে একজন সহ-উপাচার্য থাকবেন, সুনির্দিষ্ট অফিস থাকবে, কিন্তু সেগুলো ঠিকমতো হয়নি।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়টি কেমন হবে, সেটির বিভিন্ন বিকল্প বা ‘মডেল’ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনো মডেল চূড়ান্ত হয়নি।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার জন্য বিভাগভিত্তিক গুণগত মানের শিক্ষকের অভাব আছে। আবার শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকসংকট রয়েছে। একেকটি বিভাগে কয়েক শ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৮ থেকে ৯ জন করে শিক্ষক। কিছু কলেজে বিভাগ অনুযায়ী তা আরও কম। আবার সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষা দেরিতে নেওয়া হয়, আবার ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়। তাঁরা পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। শ্রেণিকক্ষের সংকটসহ অন্যান্য সংকটও রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। ভালো মানের লাইব্রেরি কম। আবার কখনো কখনো সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষ না করেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি থাকলেও এই সাত কলেজে বর্ষভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়নের সম্মানীসহ নানা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কলেজগুলোর শিক্ষকদেরও কিছু অভিযোগ আছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গেই খারাপ আচরণ করে, সেখানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। তাই এই সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় কবে হবে, সেই ঘোষণার আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসন দিয়ে এই সাত কলেজ চালাতে হবে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ থাকতে পারবেন না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষা দেরিতে নেওয়া হয়, আবার ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়। তাঁরা পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। শ্রেণিকক্ষের সংকটসহ অন্যান্য সংকটও রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। ভালো মানের লাইব্রেরি কম।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর আগের চেয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতিও হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকার সময়ে স্বল্প সংখ্যক ক্লাস করেও পরীক্ষা দেওয়া যেত, সেখানে এখন পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই কেবল এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এই সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতায় ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এই সাত কলেজের বিষয়ে সম্মানজনক সুরাহা হোক। এটা সবাই চান। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি সবার জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।