মো. মহিউদ্দিন লিটন
বাংলা নববর্ষ হোক আমাদের আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার বছর। দেশের উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে সবার সংগঠিত শক্তি কাজ করুক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে চলুক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির বাংলাদেশে বৈষম্য থাকবে না। অন্যায়ের কাছে অসহায় হবে না। দেশের যে আইন আছে, সে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়ুক। সব রাজনৈতিক কার্যক্রম মানবতার ও উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে। শান্তি আর পারস্পরিক সহমর্মিতায় এগিয়ে চলুক আমাদের প্রিয় সোনার বাংলা। আমরা এগিয়ে যেতে চাই অনেক দূরে। নতুন বছরে দুঃখী মানুষ আর পীড়িত জনের পাশে আমাদের মানবতা থাকবে। যারা উগ্রতা, হানাহানি সৃষ্টি করবে, তাদেরকে ঘৃণা করব। শিশুদের ওপর নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, মাদকদ্রব্যর ব্যবহার কমে যাওয়ার প্রত্যাশায় থাকবে।
পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুনকে স্বাগত জানানোর উৎসবকেই নববর্ষ হিসেবে পালন করা হয়। নতুনের প্রতি সব সময়ই সব মানুষেরই থাকে বিশেষ আগ্রহও উদ্দীপনা। কালের পরিক্রমায় নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতে আসে নতুন বছর। একটি জাতির সংস্কৃতি সেই জাতির নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, ধ্যানধারণা ইত্যাদি সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্টভাবে ধারণ করে রাখে। মূলত সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির দর্পণ আর সংস্কৃতির বহুবিধ উপাদানের মধ্যে নববর্ষও অন্যতম একটি।
দেশ, জাতি ও সংস্কৃতিভেদে প্রত্যেকের আলাদা বর্ষপঞ্জি রয়েছে। আমাদের রয়েছে বর্ষপঞ্জি যাকে আমরা নববর্ষ বলি। নববর্ষ বাঙালিদের জীবনে নতুনের আবাহন। পুরাতনকে, ন্যায় ও সত্যকে, সুন্দর ও আনন্দকে বরণ করার সর্বজনীন উৎসব আমাদের নববর্ষ। এ হলো শত্রুতা ভুলে গিয়ে বন্ধুত্বের আহ্বানের সময়। ধর্ম নয়, জাতি নয়, নারী নয়, পুরুষ নয়, ধনী নয়, দরিদ্র নয়, বর্ণ নয়, পেশা নয়-এ হলো সর্বমানবীয় সম্মিলন। সত্য, সুন্দর ও আনন্দের সম্মিলন। এ হলো আমাদের জাতিগত সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ আয়োজন।
মানুষ আদিকাল থেকেই কোনো না কোনোভাবে দিন-ক্ষণ-মাস-বছরের হিসাব রাখতে প্রয়াসী হয়েছে চাঁদ দেখে, নক্ষত্র দেখে, সূর্য দেখে অথবা রাত- দিনের আগমন-নির্গমন অবলোকন করে বা ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ করে। সাধারণ কোনো বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিন গণনা, মাস গণনা, বছর গণনার রীতি কালক্রমে চালু হয়েছে। নক্ষত্র বিশ্লেষণ করার রীতিও আবিষ্কার হয়েছে, উদ্ভাবিত হয়েছে রাশিচক্র। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী যে বছর গণনার রীতি চালু হয় তা চান্দ্র সন নামে পরিচিতি লাভ করে। এই চান্দ্র সনে বছর হয় কমবেশি ৩৫৪ দিনে আর সূর্য্যরে হিসাবে যে বছর গণনার রীতি চালু হয়, তা সৌর সন নামে পরিচিত হয়। সৌর সনের বছর হয় সাধারণত ৩৬৫ দিনে।
ইতিহাসবিদদের মতে, বিশ্বব্যাপী পালিত উৎসবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন হিসেবে মনে করা হয় বর্ষবরণ উৎসবকে। মেসোপটেমিয় সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব পালনের প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমান ইরাকের প্রাচীন নাম ছিল মেসোপটেমিয়া। সে সময় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই পালন করা হতো বর্ষবরণ উৎসব। অবশ্য তখন বছর গণনা করা হতো চাঁদের ওপর নির্ভর করে। যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠত, শুরু হতো নতুন বছর আর বর্ষবরণ উৎসব।
নতুন বর্ষ হবে যেসব ব্যবসায়ী ভেজাল মেশানোর প্রেমে বিভোর, সাধারণ ভোক্তাদের নির্ভেজাল খাদ্যদ্রব্য পরিবেশন করেন, তারা পরিবর্তন হবেন। ঘুষখোরের বোধোদয় হবে। ঘুষ খোর ঘুষ খাবেন না। আমরা সব অশুভ চিন্তাচেতনাকে পরাজিত করে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণে সচেষ্ট থাকব। হিংসার দাবানলে পৃথিবীর মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের অন্তরে। মহামনীষীদের বাণীগুলো আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলো অনেক আগে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নিজস্ব মতাদর্শের মানুষ। ভিন্নমতের মানুষগুলোকে কোণঠাসা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে।
সকালে উন্মুক্ত মঞ্চে যাদেরকে শান্তির পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়, বিকালে তাদের কাউকে দেখা যায় পরিবেশ অশান্ত করতে। বলি এক রকম, কাজ করি আরেক রকম। ছোটবেলা থেকে শিখেছি, আমরা সত্য কথা বলব। সেই সত্যকে আমরা ধারণ করে চলছি, কি না, সেটাও এই নতুন বছরে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখেছি সত্য কথা বলার নৈতিক শিক্ষা। কর্মজীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা এবং স্বীয় মতাদর্শের মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য অহরহ মিথ্যা বলছি। যখন পত্রিকায় দেখি সরকারি অফিসের সাধারণ একজন পিয়ন কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রাসাদ বানিয়েছেন, তখন চিন্তা করি আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
মানুষ যখন রাস্তায় পাঁচ টাকার জন্য রিকশাওয়ালার সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখি, তখন নিজেকে অসহায় মনে হয়। এই সব সংস্কৃতি থেকে আমরা মুক্ত হব। পরিবেশ সংরক্ষণ, শিশু ও মানবাধিকার রক্ষা, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে অনগ্রসরমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মৌলিক অধিকার রক্ষা সচেষ্ট থাকতে হবে।
আমরা এক নিষ্ঠুর সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দয়া, মমতা এসব শব্দের কোনো অস্তিত্ব কমে যাচ্ছে, তার জায়গা দখল করে নিয়েছে অনৈতিকতা, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা এ জাতীয় সব নীতিবাচক শব্দের কালো হাত। পারিবারিক সামাজিক অবক্ষয়জনিত একের পর এক বীভৎস ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ। হত্যা, ধর্ষণ, আত্মহননের মিছিলে বেরিয়ে পড়ছে সমাজের ও নৈতিকতার বিপর্যয় এবং অধপতনের ভয়ানক চিত্র। জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র আজকের যুব বা তরুণসমাজ। কিন্তু তারা যেভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, এই নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এর কুপ্রভাবে যেভাবে আমাদের তারুণ্য শক্তি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার।
নববর্ষ হউক যুদ্ধমুক্ত ও সংঘাতমুক্ত বছর। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, হামাস ও ইসরাইল যুদ্ধের প্রভাবে অসংখ্য শিশু তাদের প্রিয় মা-বাবাকে হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। যুদ্ধের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাব আমাদের চলমান জীবনে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তাই বর্তমানে নতুন বছর উদযাপন অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। সবাই আশা নিয়েই জীবন ধারণ করে। আমরাও আশাবাদী আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে। নবপ্রেরণায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে মানুষের মন। সব কালিমা ধুয়ে মুছে যাক। নবসৃষ্টির উল্লাসে এগিয়ে যাক দেশের জনসাধারণ। পৃথিবী হোক শান্তির আবাসস্থল। প্রীতিপূর্ণ ও সম্প্রতিতে পূর্ণ হোক পৃথিবী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করছি, নতুন বছরকে নিয়ে লিখেছেন, নিশি অবসান প্রায়, ঐ পুরাাতন বর্ষ হয় গত! আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ , কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।
বাংলা নববর্ষ হোক আমাদের আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার বছর। দেশের উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে সবার সংগঠিত শক্তি কাজ করুক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে চলুক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির বাংলাদেশে বৈষম্য থাকবে না। অন্যায়ের কাছে অসহায় হবে না। দেশের যে আইন আছে, সে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়ুক। সব রাজনৈতিক কার্যক্রম মানবতার ও উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে। শান্তি আর পারস্পরিক সহমর্মিতায় এগিয়ে চলুক আমাদের প্রিয় সোনার বাংলা। আমরা এগিয়ে যেতে চাই অনেক দূরে। নতুন বছরে দুঃখী মানুষ আর পীড়িত জনের পাশে আমাদের মানবতা থাকবে। যারা উগ্রতা, হানাহানি সৃষ্টি করবে, তাদেরকে ঘৃণা করব। শিশুদের ওপর নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, মাদকদ্রব্যর ব্যবহার কমে যাওয়ার প্রত্যাশায় থাকবে।
পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুনকে স্বাগত জানানোর উৎসবকেই নববর্ষ হিসেবে পালন করা হয়। নতুনের প্রতি সব সময়ই সব মানুষেরই থাকে বিশেষ আগ্রহও উদ্দীপনা। কালের পরিক্রমায় নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতে আসে নতুন বছর। একটি জাতির সংস্কৃতি সেই জাতির নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, ধ্যানধারণা ইত্যাদি সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্টভাবে ধারণ করে রাখে। মূলত সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির দর্পণ আর সংস্কৃতির বহুবিধ উপাদানের মধ্যে নববর্ষও অন্যতম একটি।
দেশ, জাতি ও সংস্কৃতিভেদে প্রত্যেকের আলাদা বর্ষপঞ্জি রয়েছে। আমাদের রয়েছে বর্ষপঞ্জি যাকে আমরা নববর্ষ বলি। নববর্ষ বাঙালিদের জীবনে নতুনের আবাহন। পুরাতনকে, ন্যায় ও সত্যকে, সুন্দর ও আনন্দকে বরণ করার সর্বজনীন উৎসব আমাদের নববর্ষ। এ হলো শত্রুতা ভুলে গিয়ে বন্ধুত্বের আহ্বানের সময়। ধর্ম নয়, জাতি নয়, নারী নয়, পুরুষ নয়, ধনী নয়, দরিদ্র নয়, বর্ণ নয়, পেশা নয়-এ হলো সর্বমানবীয় সম্মিলন। সত্য, সুন্দর ও আনন্দের সম্মিলন। এ হলো আমাদের জাতিগত সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ আয়োজন।
মানুষ আদিকাল থেকেই কোনো না কোনোভাবে দিন-ক্ষণ-মাস-বছরের হিসাব রাখতে প্রয়াসী হয়েছে চাঁদ দেখে, নক্ষত্র দেখে, সূর্য দেখে অথবা রাত- দিনের আগমন-নির্গমন অবলোকন করে বা ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ করে। সাধারণ কোনো বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিন গণনা, মাস গণনা, বছর গণনার রীতি কালক্রমে চালু হয়েছে। নক্ষত্র বিশ্লেষণ করার রীতিও আবিষ্কার হয়েছে, উদ্ভাবিত হয়েছে রাশিচক্র। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী যে বছর গণনার রীতি চালু হয় তা চান্দ্র সন নামে পরিচিতি লাভ করে। এই চান্দ্র সনে বছর হয় কমবেশি ৩৫৪ দিনে আর সূর্য্যরে হিসাবে যে বছর গণনার রীতি চালু হয়, তা সৌর সন নামে পরিচিত হয়। সৌর সনের বছর হয় সাধারণত ৩৬৫ দিনে।
ইতিহাসবিদদের মতে, বিশ্বব্যাপী পালিত উৎসবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন হিসেবে মনে করা হয় বর্ষবরণ উৎসবকে। মেসোপটেমিয় সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব পালনের প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমান ইরাকের প্রাচীন নাম ছিল মেসোপটেমিয়া। সে সময় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই পালন করা হতো বর্ষবরণ উৎসব। অবশ্য তখন বছর গণনা করা হতো চাঁদের ওপর নির্ভর করে। যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠত, শুরু হতো নতুন বছর আর বর্ষবরণ উৎসব।
নতুন বর্ষ হবে যেসব ব্যবসায়ী ভেজাল মেশানোর প্রেমে বিভোর, সাধারণ ভোক্তাদের নির্ভেজাল খাদ্যদ্রব্য পরিবেশন করেন, তারা পরিবর্তন হবেন। ঘুষখোরের বোধোদয় হবে। ঘুষ খোর ঘুষ খাবেন না। আমরা সব অশুভ চিন্তাচেতনাকে পরাজিত করে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণে সচেষ্ট থাকব। হিংসার দাবানলে পৃথিবীর মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের অন্তরে। মহামনীষীদের বাণীগুলো আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলো অনেক আগে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নিজস্ব মতাদর্শের মানুষ। ভিন্নমতের মানুষগুলোকে কোণঠাসা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে।
সকালে উন্মুক্ত মঞ্চে যাদেরকে শান্তির পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়, বিকালে তাদের কাউকে দেখা যায় পরিবেশ অশান্ত করতে। বলি এক রকম, কাজ করি আরেক রকম। ছোটবেলা থেকে শিখেছি, আমরা সত্য কথা বলব। সেই সত্যকে আমরা ধারণ করে চলছি, কি না, সেটাও এই নতুন বছরে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখেছি সত্য কথা বলার নৈতিক শিক্ষা। কর্মজীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা এবং স্বীয় মতাদর্শের মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য অহরহ মিথ্যা বলছি। যখন পত্রিকায় দেখি সরকারি অফিসের সাধারণ একজন পিয়ন কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রাসাদ বানিয়েছেন, তখন চিন্তা করি আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
মানুষ যখন রাস্তায় পাঁচ টাকার জন্য রিকশাওয়ালার সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখি, তখন নিজেকে অসহায় মনে হয়। এই সব সংস্কৃতি থেকে আমরা মুক্ত হব। পরিবেশ সংরক্ষণ, শিশু ও মানবাধিকার রক্ষা, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে অনগ্রসরমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মৌলিক অধিকার রক্ষা সচেষ্ট থাকতে হবে।
আমরা এক নিষ্ঠুর সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দয়া, মমতা এসব শব্দের কোনো অস্তিত্ব কমে যাচ্ছে, তার জায়গা দখল করে নিয়েছে অনৈতিকতা, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা এ জাতীয় সব নীতিবাচক শব্দের কালো হাত। পারিবারিক সামাজিক অবক্ষয়জনিত একের পর এক বীভৎস ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ। হত্যা, ধর্ষণ, আত্মহননের মিছিলে বেরিয়ে পড়ছে সমাজের ও নৈতিকতার বিপর্যয় এবং অধপতনের ভয়ানক চিত্র। জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র আজকের যুব বা তরুণসমাজ। কিন্তু তারা যেভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, এই নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এর কুপ্রভাবে যেভাবে আমাদের তারুণ্য শক্তি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার।
নববর্ষ হউক যুদ্ধমুক্ত ও সংঘাতমুক্ত বছর। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, হামাস ও ইসরাইল যুদ্ধের প্রভাবে অসংখ্য শিশু তাদের প্রিয় মা-বাবাকে হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। যুদ্ধের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাব আমাদের চলমান জীবনে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তাই বর্তমানে নতুন বছর উদযাপন অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। সবাই আশা নিয়েই জীবন ধারণ করে। আমরাও আশাবাদী আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে। নবপ্রেরণায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে মানুষের মন। সব কালিমা ধুয়ে মুছে যাক। নবসৃষ্টির উল্লাসে এগিয়ে যাক দেশের জনসাধারণ। পৃথিবী হোক শান্তির আবাসস্থল। প্রীতিপূর্ণ ও সম্প্রতিতে পূর্ণ হোক পৃথিবী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করছি, নতুন বছরকে নিয়ে লিখেছেন, নিশি অবসান প্রায়, ঐ পুরাাতন বর্ষ হয় গত! আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ , কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।