নিজস্ব প্রতিবেদক
সেলাই করে কোটিপতি! বাংলা চলচ্চিত্রে এমন দৃশ্য একসময় কদাচিৎ দেখা মিলত। বাস্তবে এমন ঘটনার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এমনই এক নারীর সন্ধান মিলেছে কুমিল্লায়। ওই নারী উদ্যোক্তার জীবন কাহিনি হার মানায় সিনেমাকেও।
ওই নারীর নাম নাছিমা খানম। বাড়ি থেকে ১০০ টাকা নিয়ে কুমিল্লায় আসেন তিনি। সেই নারী এখন কোটিপতি। জীবনের নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে এক পর্যায়ে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জামা কাপড় সেলাই করেন। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠেন তিনি। পেয়েছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভাগীয় পুরস্কার, বিভিন্ন সংগঠনের সম্মাননা ও সনদ।
কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর হাজী প্লাজার ২য় তলায় জুলি লেডিস টেইলার্সে দেখা হয় নাছিমা খানমের সাথে। শেয়ার করেন তার জীবনের গল্প।
অন্য সবার মতো তার ১ম দিকে নাছিমা খানমের জীবনটা সুখকর ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে বাড়ি ফেরেননি নাছিমা খানমের বাবা খলিলুর রহমান খান। খুব ছোট বেলায় তাঁর বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের মতিউর রহমানের সাথে। নাছিমার বয়স যখন ১৮, তখন তিনি ৩ ছেলে সন্তানের জননী। ছিলেন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ১৯৮৮ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তার স্বামী মতিউর রহমানকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
স্বামী মারা যাওয়ায় ৩ ছেলেকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েন নাছিমা। ঠাঁই হয়নি স্বামীর বাড়ি। সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়ি। এর মধ্যেই ৪র্থ ছেলের জন্ম হয়। বেশি দিন না যেতেই বাবার বাড়িতেও থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এতেই দিশেহারা হয়ে পড়েন নাছিমা। কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে কাউকে কিছু না বলে রাতের আঁধারে মাত্র ১০০ টাকা নিয়ে ৪ সন্তানকে নিয়ে বাড়ি বেরিয়ে পড়েন। মালামাল নিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে ট্রাকে করে চলে আসেন কুমিল্লায়। ভোরে এসে নামেন মাজেদা বেগম নামের তার এক দুঃসম্পর্কীয় এক খালার বাসার সামনে। তখন গার্ড তাঁদের বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। পরে নাছিমার খবর শুনে তাঁর খালা ওপর থেকে নিচে এসে তাকে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। নাছিমা তাঁর জীবনের সব কাহিনি শোনানোর পরে খালা হাউজিংয়ে একটি রুম ভাড়া করে দেন। কুমিল্লা মেডিকেলের পরিচালকের সাথে কথা বলে নাছিমাকে অপারেশন রুমে সহকারী হিসেবে চাকরি ঠিক করে দেন। এতে ৪ ছেলেকে নিয়ে কোনোরকম চলতে শুরু করেন। সন্তানদের খাওয়াতেন ভাত আর তিনি খেতেন ভাতের মাড়। সন্তানদের খরচ মেটাতে বিক্রি করেছেন শরীরের রক্ত। মেডিকেলে কাজ করা অবস্থায় দেয়ালে একটি পোস্টারে দেখতে পেলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে সেলাই কাজ শিখানো হয়। সেটা দেখেই তিনি ঠাকুরপাড়া যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসে সেলাই কাজ শুরু করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেডিকেলে কাজ শেষ করে হাউজিং থেকে প্রতিদিন ঠাকুরপাড়া এসে সেলাই শিখে বাসায় বসে বসে সেলাই কাজ করতেন। নাছিমা বাসার আশপাশের লোকদের বলতেন, আমাকে সেলাইয়ের কাজ দিন, কাজ ভালো হলে আমাকে টাকা দেবেন, না হয় টাকা দিতে হবে না। নাছিমার সেলাইয়ের কাজ সুন্দর হওয়ায় ব্যাপক সাড়া মেলে হাউজিংসহ আশপাশের এলাকায়। একদিন এক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী তাঁর কাছে এসে একটি ব্লাউজ সেলাই করতে দেন। নাছিমা ব্লাউজটি এত সুন্দর করে সেলাই করে দিয়েছেন, তা দেখে সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী মুগ্ধ হয়ে যান।
পরে সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী তাকে উৎসাহ দেন টেইলার্সের দোকান দিতে। লাজুক প্রকৃতির নাছিমা চিন্তাই করতে পারেননি মার্কেটে গিয়ে সেলাইয়ের কাজ করবেন। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে সামাজিক লাজ। একপর্যায়ে ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন দোকান দেওয়ার। বড় ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভাড়া দোকান খুঁজতে। খালি হাতে ভয়ে ভয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে দোকান দেখেন। কুমিল্লা নিউ মার্কেটে আমিন টেইলার্স নামে একটি দোকানের সাটার বন্ধ দেখেন। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকানটি বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জিলা স্কুল রোডে দোকানের মালিক অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের বাসায় যান মা-ছেলে। বলেন তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত। তাদের দুঃখের কথা শুনে কোনো অগ্রিম ছাড়াই দোকানের চাবি দিয়ে দেন নাছিমার হাতে। মা-ছেলে মিলে পরিষ্কার করে রং করেন দোকান। সেখানে আগে থেকেই মেশিন ও কাটিং টেবিল থাকায় মাত্র একটি কাঁচি আর ফিতা নিয়ে শুরু হয় নাছিমার নতুন অধ্যায়। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তখনকার সময়ে শহরের একমাত্র নারী দর্জি ছিলেন নাছিমা। বর্তমানে নগরীর মনোহরপুর হাজি প্লাজার দ্বিতীয় তলায় ও রেসকোর্স এলাকায় ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় দুটি টেইলার্সের দোকান আছে তাঁর। এছাড়া ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় আরও দুটি থান কাপড়ের দোকান আছে নাছিমার।
নাছিমা খানম বলেন, ধৈর্য ও সততার সাথে কাজ করলে আল্লাহ একদিন সফলতা দান করবেনই। তবে অল্পতে আমাদের হাল ছেড়ে দেয়া যাবেনা। দুস্থ ও বিধবা নারীদের স্বাবলম্বী করতে একটি প্রতিষ্ঠান করার স্বপ্ন রয়েছে তাঁর।
সেলাই করে কোটিপতি! বাংলা চলচ্চিত্রে এমন দৃশ্য একসময় কদাচিৎ দেখা মিলত। বাস্তবে এমন ঘটনার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এমনই এক নারীর সন্ধান মিলেছে কুমিল্লায়। ওই নারী উদ্যোক্তার জীবন কাহিনি হার মানায় সিনেমাকেও।
ওই নারীর নাম নাছিমা খানম। বাড়ি থেকে ১০০ টাকা নিয়ে কুমিল্লায় আসেন তিনি। সেই নারী এখন কোটিপতি। জীবনের নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে এক পর্যায়ে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জামা কাপড় সেলাই করেন। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠেন তিনি। পেয়েছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভাগীয় পুরস্কার, বিভিন্ন সংগঠনের সম্মাননা ও সনদ।
কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর হাজী প্লাজার ২য় তলায় জুলি লেডিস টেইলার্সে দেখা হয় নাছিমা খানমের সাথে। শেয়ার করেন তার জীবনের গল্প।
অন্য সবার মতো তার ১ম দিকে নাছিমা খানমের জীবনটা সুখকর ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে বাড়ি ফেরেননি নাছিমা খানমের বাবা খলিলুর রহমান খান। খুব ছোট বেলায় তাঁর বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের মতিউর রহমানের সাথে। নাছিমার বয়স যখন ১৮, তখন তিনি ৩ ছেলে সন্তানের জননী। ছিলেন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ১৯৮৮ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তার স্বামী মতিউর রহমানকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
স্বামী মারা যাওয়ায় ৩ ছেলেকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েন নাছিমা। ঠাঁই হয়নি স্বামীর বাড়ি। সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়ি। এর মধ্যেই ৪র্থ ছেলের জন্ম হয়। বেশি দিন না যেতেই বাবার বাড়িতেও থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এতেই দিশেহারা হয়ে পড়েন নাছিমা। কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে কাউকে কিছু না বলে রাতের আঁধারে মাত্র ১০০ টাকা নিয়ে ৪ সন্তানকে নিয়ে বাড়ি বেরিয়ে পড়েন। মালামাল নিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে ট্রাকে করে চলে আসেন কুমিল্লায়। ভোরে এসে নামেন মাজেদা বেগম নামের তার এক দুঃসম্পর্কীয় এক খালার বাসার সামনে। তখন গার্ড তাঁদের বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। পরে নাছিমার খবর শুনে তাঁর খালা ওপর থেকে নিচে এসে তাকে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। নাছিমা তাঁর জীবনের সব কাহিনি শোনানোর পরে খালা হাউজিংয়ে একটি রুম ভাড়া করে দেন। কুমিল্লা মেডিকেলের পরিচালকের সাথে কথা বলে নাছিমাকে অপারেশন রুমে সহকারী হিসেবে চাকরি ঠিক করে দেন। এতে ৪ ছেলেকে নিয়ে কোনোরকম চলতে শুরু করেন। সন্তানদের খাওয়াতেন ভাত আর তিনি খেতেন ভাতের মাড়। সন্তানদের খরচ মেটাতে বিক্রি করেছেন শরীরের রক্ত। মেডিকেলে কাজ করা অবস্থায় দেয়ালে একটি পোস্টারে দেখতে পেলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে সেলাই কাজ শিখানো হয়। সেটা দেখেই তিনি ঠাকুরপাড়া যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসে সেলাই কাজ শুরু করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেডিকেলে কাজ শেষ করে হাউজিং থেকে প্রতিদিন ঠাকুরপাড়া এসে সেলাই শিখে বাসায় বসে বসে সেলাই কাজ করতেন। নাছিমা বাসার আশপাশের লোকদের বলতেন, আমাকে সেলাইয়ের কাজ দিন, কাজ ভালো হলে আমাকে টাকা দেবেন, না হয় টাকা দিতে হবে না। নাছিমার সেলাইয়ের কাজ সুন্দর হওয়ায় ব্যাপক সাড়া মেলে হাউজিংসহ আশপাশের এলাকায়। একদিন এক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী তাঁর কাছে এসে একটি ব্লাউজ সেলাই করতে দেন। নাছিমা ব্লাউজটি এত সুন্দর করে সেলাই করে দিয়েছেন, তা দেখে সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী মুগ্ধ হয়ে যান।
পরে সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী তাকে উৎসাহ দেন টেইলার্সের দোকান দিতে। লাজুক প্রকৃতির নাছিমা চিন্তাই করতে পারেননি মার্কেটে গিয়ে সেলাইয়ের কাজ করবেন। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে সামাজিক লাজ। একপর্যায়ে ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন দোকান দেওয়ার। বড় ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভাড়া দোকান খুঁজতে। খালি হাতে ভয়ে ভয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে দোকান দেখেন। কুমিল্লা নিউ মার্কেটে আমিন টেইলার্স নামে একটি দোকানের সাটার বন্ধ দেখেন। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকানটি বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জিলা স্কুল রোডে দোকানের মালিক অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের বাসায় যান মা-ছেলে। বলেন তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত। তাদের দুঃখের কথা শুনে কোনো অগ্রিম ছাড়াই দোকানের চাবি দিয়ে দেন নাছিমার হাতে। মা-ছেলে মিলে পরিষ্কার করে রং করেন দোকান। সেখানে আগে থেকেই মেশিন ও কাটিং টেবিল থাকায় মাত্র একটি কাঁচি আর ফিতা নিয়ে শুরু হয় নাছিমার নতুন অধ্যায়। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তখনকার সময়ে শহরের একমাত্র নারী দর্জি ছিলেন নাছিমা। বর্তমানে নগরীর মনোহরপুর হাজি প্লাজার দ্বিতীয় তলায় ও রেসকোর্স এলাকায় ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় দুটি টেইলার্সের দোকান আছে তাঁর। এছাড়া ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় আরও দুটি থান কাপড়ের দোকান আছে নাছিমার।
নাছিমা খানম বলেন, ধৈর্য ও সততার সাথে কাজ করলে আল্লাহ একদিন সফলতা দান করবেনই। তবে অল্পতে আমাদের হাল ছেড়ে দেয়া যাবেনা। দুস্থ ও বিধবা নারীদের স্বাবলম্বী করতে একটি প্রতিষ্ঠান করার স্বপ্ন রয়েছে তাঁর।