স্মরণ
নির্বাচনী গণসংযোগে থাকাবস্থায় খবর এল তিনি মনোনয়ন পাননি
গাজীউল হক সোহাগ
২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল হাকিম (৮৫) নির্বাচনী গণসংযোগ করছিলেন সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী বাজারে। হঠাৎ খবর এলো তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-৮( বরুড়া ও সদর দক্ষিণের একাংশ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তখন তাঁর সঙ্গে প্রচারণায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী মো. কবির হোসেন ভূঁইয়া। কবির হোসেন তাঁকে বললেন, চাচা আর গণসংযোগ কইরেন না। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। আবদুল হাকিম বিশ^াস করতে পারলেন না, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা কবিবের কথা। পরে তিনি খবর নিলেন বিভিন্ন স্থানে। খবরের সত্যতা পেয়ে গণসংযোগ ছেড়ে বাসায় চলে আসলেন।
এক বুক কষ্ট নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই থেকে গেলেন। ২০১৪ সালেও চেষ্টা করেছিলেন দলীয় মনোনয়ন পেতে। কিন্তু দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। তাঁর ছেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জাতীয় পার্টিও প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এর কিছুদিন পর ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ বরুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া মোস্তফা। ওই নির্বাচনের দিন বিকেল তিনটা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে হৃদরোগে মারা যান আবদুল হাকিম। তিনি ১৯৭০,১৯৭৩, ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে বরুড়া থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এতোবার এই আসন থেকে কোন রাজনৈতিক নেতা এমপি হননি।
আবদুল হাকিম সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। রাজনীতিতে টাকা বিলানো তিনি পছন্দ করতেন না। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের আদর্শের ধারক ও বাহক। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বরুড়ায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। তাঁর সহধর্মিনী গত হয়েছেন ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে। স্ত্রীর মৃত্যুর ১৮ বছর পর তিনি মারা যান। স্ত্রীর নামে বরুড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন রেহানা কারিগরি কলেজ। মায়ের নামে করেন জহিরা মহিলা কলেজ। বরুড়া শহীদস্মৃতি সরকারি কলেজ, বরুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাঁর হাতে গড়া। তাঁর চার ছেলে ও তিন মেয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে থাকাবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
আবদুল হাকিম মানুষ কে সম্মান করতেন। ছোটবড় সবাইকে আপনি বলতেন। আমার পুরোনো কর্মস্থলে খাড়া সিঁিড় বেয়ে তিনি বহুবার এসেছিলেন। তাঁকে হোটেল কস্তুরি থেকে ভালোমানের নাস্তা দিতাম। তিনি আমাকে বলতেন, এতো দামি নাস্তা দিলেন যে। আমি বলতাম, চাচা আপনি খান। রাজনীতিতে তাঁকে কেউ সজোরে খামচি না দিলে তিনি প্রতিবাদ করতেন না। শেষ জীবনে তাঁর বহুকর্মী তাঁর সঙ্গে বেইমানি করেন। তিনি বলতেন, আমি তো টাকা দিতে পারব না। এখন টাকার যুগ। টাকা ছিটানোর যুগ। আমি অচল টাকার ক্ষেত্রে।
আবদুল হাকিম বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি তেলের ব্যবসা, পেট্রোল পাম্পের ব্যবসা করতেন। কুমিল্লা শহরে প্রবেশের প্রায় সব পথে তাঁর পেট্রল পাম্প। আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম চাচা কেমনে আপনার মাথায় এই ধারণা এলো। তিনি বললেন , আগে ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক ছিল শহরের ওপর দিয়ে। আমি শাসনগাছা, চকবাজার পেরিয়ে পূর্বাঞ্চলে, সুয়াগাজী, টমছমব্রিজ ও ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় পাম্প করেছি পাকিস্তান আমলে। সব যানবাহন আমার পাম্পের সামনে দিয়ে যেতো। এতে করে বিক্রি বাড়তো। এই টাকা দিয়েই তো বরুড়ার মানুষের খেদমত করতাম। তিনি টমছমব্রিজ এলাকায় বড় ধরণের জায়গা রেখে গেছেন। ঠাকুরপাড়া মডার্নস্কুলের পাশে তাঁর জায়গা। মডার্নস্কুলের পাশের জায়গা নিয়ে তাঁকে প্রায়ই ডিস্টার্ব করতো। তিনি কৌশলে চলতেন। হাঙামা পছন্দ করতেন না। খুব হিসেব করে চলতেন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছিলেন সৎ, আদর্শবান। কোন বিষয়ে অহংকার করতেন না। সাদাসিধে জীবন ছিল তাঁর। আস্তে আস্তে কথা বলতেন। নির্বাচনী এলাকায় যেতেন সাদা রঙের জীপ নিয়ে। এলাকায় ওই গাড়ি দেখলে মানুষ বলতেন, হাকিম সাহেব এসেছেন। কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা বাসা থেকে বরুড়ার উদ্দেশ্যে বের হলে, মানুষ বলতেন হাকিম সাহেব – বরুড়ায় যাচ্ছেন। দলকানা ছিলেন না। মানবিক মানুষ ছিলেন। দলীয় প্রধানের সামনে কথা বলতেন সাহস নিয়ে। এমন নেতা বিরল। তাঁর মতো চারবার কেউ বরুড়া থেকে এমপি হবেন, আমি তো দেখি না।
আজ তাঁর ১১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। অতল শ্রদ্ধা।
২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল হাকিম (৮৫) নির্বাচনী গণসংযোগ করছিলেন সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী বাজারে। হঠাৎ খবর এলো তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-৮( বরুড়া ও সদর দক্ষিণের একাংশ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তখন তাঁর সঙ্গে প্রচারণায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী মো. কবির হোসেন ভূঁইয়া। কবির হোসেন তাঁকে বললেন, চাচা আর গণসংযোগ কইরেন না। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। আবদুল হাকিম বিশ^াস করতে পারলেন না, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা কবিবের কথা। পরে তিনি খবর নিলেন বিভিন্ন স্থানে। খবরের সত্যতা পেয়ে গণসংযোগ ছেড়ে বাসায় চলে আসলেন।
এক বুক কষ্ট নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই থেকে গেলেন। ২০১৪ সালেও চেষ্টা করেছিলেন দলীয় মনোনয়ন পেতে। কিন্তু দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। তাঁর ছেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জাতীয় পার্টিও প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এর কিছুদিন পর ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ বরুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া মোস্তফা। ওই নির্বাচনের দিন বিকেল তিনটা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে হৃদরোগে মারা যান আবদুল হাকিম। তিনি ১৯৭০,১৯৭৩, ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে বরুড়া থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এতোবার এই আসন থেকে কোন রাজনৈতিক নেতা এমপি হননি।
আবদুল হাকিম সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। রাজনীতিতে টাকা বিলানো তিনি পছন্দ করতেন না। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের আদর্শের ধারক ও বাহক। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বরুড়ায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। তাঁর সহধর্মিনী গত হয়েছেন ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে। স্ত্রীর মৃত্যুর ১৮ বছর পর তিনি মারা যান। স্ত্রীর নামে বরুড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন রেহানা কারিগরি কলেজ। মায়ের নামে করেন জহিরা মহিলা কলেজ। বরুড়া শহীদস্মৃতি সরকারি কলেজ, বরুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাঁর হাতে গড়া। তাঁর চার ছেলে ও তিন মেয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে থাকাবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
আবদুল হাকিম মানুষ কে সম্মান করতেন। ছোটবড় সবাইকে আপনি বলতেন। আমার পুরোনো কর্মস্থলে খাড়া সিঁিড় বেয়ে তিনি বহুবার এসেছিলেন। তাঁকে হোটেল কস্তুরি থেকে ভালোমানের নাস্তা দিতাম। তিনি আমাকে বলতেন, এতো দামি নাস্তা দিলেন যে। আমি বলতাম, চাচা আপনি খান। রাজনীতিতে তাঁকে কেউ সজোরে খামচি না দিলে তিনি প্রতিবাদ করতেন না। শেষ জীবনে তাঁর বহুকর্মী তাঁর সঙ্গে বেইমানি করেন। তিনি বলতেন, আমি তো টাকা দিতে পারব না। এখন টাকার যুগ। টাকা ছিটানোর যুগ। আমি অচল টাকার ক্ষেত্রে।
আবদুল হাকিম বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি তেলের ব্যবসা, পেট্রোল পাম্পের ব্যবসা করতেন। কুমিল্লা শহরে প্রবেশের প্রায় সব পথে তাঁর পেট্রল পাম্প। আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম চাচা কেমনে আপনার মাথায় এই ধারণা এলো। তিনি বললেন , আগে ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক ছিল শহরের ওপর দিয়ে। আমি শাসনগাছা, চকবাজার পেরিয়ে পূর্বাঞ্চলে, সুয়াগাজী, টমছমব্রিজ ও ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় পাম্প করেছি পাকিস্তান আমলে। সব যানবাহন আমার পাম্পের সামনে দিয়ে যেতো। এতে করে বিক্রি বাড়তো। এই টাকা দিয়েই তো বরুড়ার মানুষের খেদমত করতাম। তিনি টমছমব্রিজ এলাকায় বড় ধরণের জায়গা রেখে গেছেন। ঠাকুরপাড়া মডার্নস্কুলের পাশে তাঁর জায়গা। মডার্নস্কুলের পাশের জায়গা নিয়ে তাঁকে প্রায়ই ডিস্টার্ব করতো। তিনি কৌশলে চলতেন। হাঙামা পছন্দ করতেন না। খুব হিসেব করে চলতেন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছিলেন সৎ, আদর্শবান। কোন বিষয়ে অহংকার করতেন না। সাদাসিধে জীবন ছিল তাঁর। আস্তে আস্তে কথা বলতেন। নির্বাচনী এলাকায় যেতেন সাদা রঙের জীপ নিয়ে। এলাকায় ওই গাড়ি দেখলে মানুষ বলতেন, হাকিম সাহেব এসেছেন। কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা বাসা থেকে বরুড়ার উদ্দেশ্যে বের হলে, মানুষ বলতেন হাকিম সাহেব – বরুড়ায় যাচ্ছেন। দলকানা ছিলেন না। মানবিক মানুষ ছিলেন। দলীয় প্রধানের সামনে কথা বলতেন সাহস নিয়ে। এমন নেতা বিরল। তাঁর মতো চারবার কেউ বরুড়া থেকে এমপি হবেন, আমি তো দেখি না।
আজ তাঁর ১১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। অতল শ্রদ্ধা।
নির্বাচনের আগে ৩ শর্ত পূরণ করতে হবে : জামায়াত আমির
২ দিন আগেএরই ধারাবাহিকতায় আজ দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই বৈঠক।
৩ দিন আগে