আবদুল্লাহ আল মারুফ
কুমিল্লা নগরীর প্রবেশপথ চকবাজার, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, জাঙ্গালিয়া বাস স্ট্যান্ড, টমছমব্রিজ, শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড, পালপাড়া ব্রিজ, টিক্কারচর ব্রিজ, রাণীর বাজার, কান্দিরপাড়, নিউমার্কেট, মনোহরপুর, স্টেশনরোড, রাজগঞ্জ, মেডিকেল রোডসহ নগরীর ভেতরের বিভিন্ন সড়ক ও উপসড়কে প্রতিদিনই যানজট লেগে যায়। এই যানজটের স্থায়িত্ব কখনও একঘণ্টা, কখনো গোটাদিন হয়ে থাকে। এতে আটকে যায় অ্যাম্বুলেন্স নারী ও শিশু যাত্রীসহ সকল যানবাহন। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা নষ্ট হয় শিক্ষার্থীদেরও।
যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই যানজটের বেশির ভাগ কারণ অবৈধ পার্কিং, সড়ক দখল, ফুটপাত দখল ও রাস্তা দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখা। তবে যানজট প্রশ্নে সবার আগে যাদের নাম আসবে সেগুলো হলো-কুমিল্লার কয়েকটি হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে গতকাল বুধবার কুমিল্লার যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, যেগুলোর সবচেয়ে বেশি যারা দায়ী তারা যেন বাতির নিচে অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়ে। এই যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন না করায় ক্ষুব্ধ চালক, যাত্রী ও কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দারা।
যে কারণে যানজট রাণীরবাজারে
রাণীর বাজার। কুমিল্লার নগরীর একটি ব্যস্ততম বাজার। এই বাজারের পার হয়েই শহরতলীর পশ্চিম-দক্ষিণ কোণের মানুষ শহরে প্রবেশ ও বাইর হন। যে কারণে এটি অন্যতম একটি ব্যস্ত সড়ক। তবে এই সড়কের যানজটের নেপথ্য আছে দুই হাসপাতাল ও দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সড়কের গাড়ি চালক, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার কুমিল্লা ট্রমা হসপিটাল, কুমিল্লার গোমতী হসপিটাল, কুমিল্লার রাণীর বাজার এলাকার হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নজরুল এলাকার কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুল ও ফরিদা বিদ্যায়তনের নাম উঠে আসে।
অভিযোগ আছে, কুমিল্লা ট্রমা হসপিটালের রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসকদের বহনকারী গাড়ি, রোগীর স্বজনদের গাড়ি ও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের গাড়ি সড়কে রেখে দেয়। এতে করে প্রায়শই দিনব্যাপী যানজট সৃষ্টি হয়। কোন ট্রাফিক পুলিশ এই এলাকায় না থাকায় যানজট কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ে ভোগান্তি। এছাড়াও রয়েছে কুমিল্লার রাণীর বাজার এলাকার হাসপাতাল ও গোমতী হাসপাতাল। এসব হাসপাতালেরও একই অবস্থা। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকদের গাড়ি রাখার তেমন কোন জায়গা নেই। যে কারণে সড়কের ওপর গাড়ি রাখা হয় এসব গাড়ি।
অভিযোগ আছে, কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার, গোমতী হসপিটালে যে পরিমাণ পার্কিংয়ের স্পেস প্রয়োজন ছিল তার অর্ধেকও নেই। এছাড়াও রাণীরবাজার এলাকার তিনতলা ভবনের হাসপাতালে একটি গাড়ি রাখার জায়গাও নেই। সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকবাহী গাড়ি। এসময় রাণীরবাজার-ঠাকুরপাড়া, রাণীরবাজার-কান্দিরপাড়সহ আশপাশের সকল এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
হাসপাতালের বাইরেও রয়েছে কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুল ও ফরিদা বিদ্যায়তন। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সময় ও ক্লাস শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। একসঙ্গে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যখন স্কুল থেকে বের হয়; তখন আশপাশের এলাকাগুলোতে যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তার প্রভাব গিয়ে পড়ে কান্দিরপাড়সহ আশপাশের সড়কগুলোতে। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের গাড়ি রাখার কোন পার্কিং স্পেস নেই। যে কারণে সড়কের ওপর দাঁড়িয়েই অনেকে যাত্রী ওঠানামা করেন। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের নেয়ার জন্য এসে রাস্তায় গাড়িতেই অবস্থা অবস্থান করেন। স্কুলের ভিতরে কোন অভিভাবক অপেক্ষার ছাউনি না থাকায় সড়কের দাঁড়িয়ে ভিড় করলে সেখানেও যানজট সৃষ্টি হয়। যার ভোগান্তি পোহাতে হয় কুমিল্লার নাগরিকদের।
এই সড়কের বাসিন্দা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নজরুল হলে শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, কুমিল্লায় সেবার নামে ভোগান্তির চিত্র নতুন নয়। এসব নিয়ে কথা বলেও কোন লাভ নেই। সমাধান কিছুই হবে না। যদি হতো আগেই হত। কারণ এটি তো সবার সামনেই। যাদের পার্কিং স্পেস নেই তারা কিভাবে হাসপাতালের অনুমতি পায়। আর হাসপাতাল হবে কোলাহলমুক্ত ও শহরের পাশে। আর কুমিল্লায় তার উল্টো। জনবহুল থানা হাসপাতাল করা হয়েছে। বিশেষ করে করোনার সময় এই সমস্যাটা বেশি ফেস করতে হয়েছে। একটা গিঞ্জি জায়গায় এতগুলো হাসপাতাল না করে একটি নিয়মের মধ্যে হাসপাতালগুলো করা উচিত। এভাবেই পরিকল্পিত নগরায়ণ করা সম্ভব।
কান্দিরপাড়-পুলিশ লাইন সড়কে দুর্ভোগ যে কারণে
কান্দিরপাড়-পুলিশ লাইন এলাকার সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। তবে এর নেপথ্যে রয়েছে কুমিল্লার মুন হসপিটাল ও ওয়াইডব্লিউসি স্কুল। ওয়াইডব্লিউসি স্কুল ছুটি হওয়ার সময়ে এই সড়ক ব্যবহার বন্ধ করে দেন কুমিল্লার অটোরিকশা চালকেরা। তারা জানেন, যখনই ওয়াইডব্লিউসি স্কুল ছুটি হয় এই সড়ক কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়াও কুমিল্লার মুন হসপিটালের সামনের যানজটের আতঙ্কে অনেকেই এই সড়ক ব্যবহার বন্ধ করে বাড়তি ভাড়ায় বিকল্প সড়ক ব্যবহার করেন।
নিউ মার্কেট সড়কের ভোগান্তি নিউ মার্কেট নিজেই
নিউ মার্কেট সড়কের ভোগান্তি নিউ মাকের্ট নিজেই। কুমিল্লার এই গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটের পার্কিং এরিয়াতেও রয়েছে দোকান। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেখানে পার্কিং এরিয়াতে সবজি ও নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া দেয়া হয়েছে।
যে কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের গাড়ি এই মার্কেটের সামনের রাস্তায় রাখা হয়। এতে করে নিউ মার্কেটসহ কান্দিরপাড় জুড়ে গাড়ি যাওয়ার জায়গা থাকে না। যে কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, জনগণের মতের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশন অবৈধভাবে কুমিল্লার নিউ মার্কেট এলাকার মসজিদটি স্থাপন করে। যেখানে মসজিদের নাম ব্যবহার করে মার্কেট করা হলেও এতে মূলত মার্কেট হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। যা সড়কের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। এর কারণেও নিউ মার্কেট এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
ভয়াবহ লাকসাম সড়ক
নগরীর লাকসাম রোডের অবস্থা অন্য সড়কগুলো থেকেও ভিন্ন। এই সড়কের যানজট এখন নিয়মিত চিত্র। এই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এর জন্য দায়ী কয়েকটি হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে কুমিল্লা নগরের মেডিকেল সেন্টার (টাওয়ার) হসপিটাল, মেডিনোভা হসপিটাল ও সালাউদ্দিন হোটেলের কারণে মূলত যানজট সৃষ্টি হয়। মেডিকেল সেন্টার হসপিটাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের খানিকটা সামনেই রাস্তার দু'ধারে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। যেগুলো সড়ককে করেছে সংকীর্ণ ও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পূর্বে এসব অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ পার্কিং নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় নিউজ আসলেও কেউই এসবের সমাধান করতে পারেনি। এছাড়াও এই হাসপাতালে আগত রোগী, স্বজন ও শতাধিক চিকিৎসকের গাড়ি রাখার তেমন কোন স্পেস নেই। যে কারণে এসব গাড়ি সড়কের ওপর রেখেই ফেরার হন তারা। অপরদিকে সালাউদ্দিন হোটেল ও হিরাঝিল হোটেলে খাবার খেতে আসা ক্রেতাদের গাড়ি রাখার কোন স্পেস নেই। যে কারণে সড়কে রেখে খাবার খেতে চান তারা। এই সুযোগেই পুরো শহরে যানজট সৃষ্টি হয়ে যায়।
কুমিল্লার তরুণ আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এসবের কোন সমাধান হবে কিনা আদৌ জানি না। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজন আছে। আমরা যা দেখে এসেছি যদি তাই চলতে থাকে কুমিল্লা শহর একসময় বাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, শুধু জনপ্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। এটির জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও পরিকল্পিত উদ্যোগ। আমরা চাই কুমিল্লা শহর বসবাসের যোগ্য শহরে পরিণত হোক।
বাস ঢুকলেই আটকে যায় সড়ক
কুমিল্লা নগরের সড়কের সংকীর্ণতার কথা সবাই জানে। এই সংকীর্ণ সড়কে যানজট আরও তীব্র হয় যখন বাস প্রবেশ করে। এর কারণ যখন কোন বাস নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় প্রবেশ করে তখন অন্য পরিবহন যাওয়ার আর তেমন জায়গা থাকে না। যেকারণে যানজটের তীব্রতা বাড়ে কয়েকগুণ।
জানা গেছে, নগরে প্রবেশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ বাস। এছাড়া একই সময় নগরীতে প্রবেশ করে বিএআইইউএসটি, সিসিএন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ময়নামতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবহন।
সূত্রে জানা গেছে, একাধিকবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কুমিল্লা নগরে বাস প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু তা আর আলোচনার টেবিল থেকে বাস্তবে রূপ নেয়নি।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় অতিরিক্ত অটোরিকশা ও মিশুক। তাই বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। আশাকরি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ভোগান্তি কমে যাবে। তাছাড়া ঈদকে সামনে রেখেও আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নেব। এতে কুমিল্লা শহরে অটোরিকশার লাগাম টানা যাবে।
কুমিল্লা নগরীর প্রবেশপথ চকবাজার, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, জাঙ্গালিয়া বাস স্ট্যান্ড, টমছমব্রিজ, শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড, পালপাড়া ব্রিজ, টিক্কারচর ব্রিজ, রাণীর বাজার, কান্দিরপাড়, নিউমার্কেট, মনোহরপুর, স্টেশনরোড, রাজগঞ্জ, মেডিকেল রোডসহ নগরীর ভেতরের বিভিন্ন সড়ক ও উপসড়কে প্রতিদিনই যানজট লেগে যায়। এই যানজটের স্থায়িত্ব কখনও একঘণ্টা, কখনো গোটাদিন হয়ে থাকে। এতে আটকে যায় অ্যাম্বুলেন্স নারী ও শিশু যাত্রীসহ সকল যানবাহন। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা নষ্ট হয় শিক্ষার্থীদেরও।
যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই যানজটের বেশির ভাগ কারণ অবৈধ পার্কিং, সড়ক দখল, ফুটপাত দখল ও রাস্তা দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখা। তবে যানজট প্রশ্নে সবার আগে যাদের নাম আসবে সেগুলো হলো-কুমিল্লার কয়েকটি হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে গতকাল বুধবার কুমিল্লার যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, যেগুলোর সবচেয়ে বেশি যারা দায়ী তারা যেন বাতির নিচে অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়ে। এই যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন না করায় ক্ষুব্ধ চালক, যাত্রী ও কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দারা।
যে কারণে যানজট রাণীরবাজারে
রাণীর বাজার। কুমিল্লার নগরীর একটি ব্যস্ততম বাজার। এই বাজারের পার হয়েই শহরতলীর পশ্চিম-দক্ষিণ কোণের মানুষ শহরে প্রবেশ ও বাইর হন। যে কারণে এটি অন্যতম একটি ব্যস্ত সড়ক। তবে এই সড়কের যানজটের নেপথ্য আছে দুই হাসপাতাল ও দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সড়কের গাড়ি চালক, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার কুমিল্লা ট্রমা হসপিটাল, কুমিল্লার গোমতী হসপিটাল, কুমিল্লার রাণীর বাজার এলাকার হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নজরুল এলাকার কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুল ও ফরিদা বিদ্যায়তনের নাম উঠে আসে।
অভিযোগ আছে, কুমিল্লা ট্রমা হসপিটালের রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসকদের বহনকারী গাড়ি, রোগীর স্বজনদের গাড়ি ও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের গাড়ি সড়কে রেখে দেয়। এতে করে প্রায়শই দিনব্যাপী যানজট সৃষ্টি হয়। কোন ট্রাফিক পুলিশ এই এলাকায় না থাকায় যানজট কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ে ভোগান্তি। এছাড়াও রয়েছে কুমিল্লার রাণীর বাজার এলাকার হাসপাতাল ও গোমতী হাসপাতাল। এসব হাসপাতালেরও একই অবস্থা। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকদের গাড়ি রাখার তেমন কোন জায়গা নেই। যে কারণে সড়কের ওপর গাড়ি রাখা হয় এসব গাড়ি।
অভিযোগ আছে, কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার, গোমতী হসপিটালে যে পরিমাণ পার্কিংয়ের স্পেস প্রয়োজন ছিল তার অর্ধেকও নেই। এছাড়াও রাণীরবাজার এলাকার তিনতলা ভবনের হাসপাতালে একটি গাড়ি রাখার জায়গাও নেই। সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকবাহী গাড়ি। এসময় রাণীরবাজার-ঠাকুরপাড়া, রাণীরবাজার-কান্দিরপাড়সহ আশপাশের সকল এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
হাসপাতালের বাইরেও রয়েছে কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুল ও ফরিদা বিদ্যায়তন। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সময় ও ক্লাস শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। একসঙ্গে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যখন স্কুল থেকে বের হয়; তখন আশপাশের এলাকাগুলোতে যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তার প্রভাব গিয়ে পড়ে কান্দিরপাড়সহ আশপাশের সড়কগুলোতে। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের গাড়ি রাখার কোন পার্কিং স্পেস নেই। যে কারণে সড়কের ওপর দাঁড়িয়েই অনেকে যাত্রী ওঠানামা করেন। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের নেয়ার জন্য এসে রাস্তায় গাড়িতেই অবস্থা অবস্থান করেন। স্কুলের ভিতরে কোন অভিভাবক অপেক্ষার ছাউনি না থাকায় সড়কের দাঁড়িয়ে ভিড় করলে সেখানেও যানজট সৃষ্টি হয়। যার ভোগান্তি পোহাতে হয় কুমিল্লার নাগরিকদের।
এই সড়কের বাসিন্দা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নজরুল হলে শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, কুমিল্লায় সেবার নামে ভোগান্তির চিত্র নতুন নয়। এসব নিয়ে কথা বলেও কোন লাভ নেই। সমাধান কিছুই হবে না। যদি হতো আগেই হত। কারণ এটি তো সবার সামনেই। যাদের পার্কিং স্পেস নেই তারা কিভাবে হাসপাতালের অনুমতি পায়। আর হাসপাতাল হবে কোলাহলমুক্ত ও শহরের পাশে। আর কুমিল্লায় তার উল্টো। জনবহুল থানা হাসপাতাল করা হয়েছে। বিশেষ করে করোনার সময় এই সমস্যাটা বেশি ফেস করতে হয়েছে। একটা গিঞ্জি জায়গায় এতগুলো হাসপাতাল না করে একটি নিয়মের মধ্যে হাসপাতালগুলো করা উচিত। এভাবেই পরিকল্পিত নগরায়ণ করা সম্ভব।
কান্দিরপাড়-পুলিশ লাইন সড়কে দুর্ভোগ যে কারণে
কান্দিরপাড়-পুলিশ লাইন এলাকার সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। তবে এর নেপথ্যে রয়েছে কুমিল্লার মুন হসপিটাল ও ওয়াইডব্লিউসি স্কুল। ওয়াইডব্লিউসি স্কুল ছুটি হওয়ার সময়ে এই সড়ক ব্যবহার বন্ধ করে দেন কুমিল্লার অটোরিকশা চালকেরা। তারা জানেন, যখনই ওয়াইডব্লিউসি স্কুল ছুটি হয় এই সড়ক কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়াও কুমিল্লার মুন হসপিটালের সামনের যানজটের আতঙ্কে অনেকেই এই সড়ক ব্যবহার বন্ধ করে বাড়তি ভাড়ায় বিকল্প সড়ক ব্যবহার করেন।
নিউ মার্কেট সড়কের ভোগান্তি নিউ মার্কেট নিজেই
নিউ মার্কেট সড়কের ভোগান্তি নিউ মাকের্ট নিজেই। কুমিল্লার এই গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটের পার্কিং এরিয়াতেও রয়েছে দোকান। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেখানে পার্কিং এরিয়াতে সবজি ও নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া দেয়া হয়েছে।
যে কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের গাড়ি এই মার্কেটের সামনের রাস্তায় রাখা হয়। এতে করে নিউ মার্কেটসহ কান্দিরপাড় জুড়ে গাড়ি যাওয়ার জায়গা থাকে না। যে কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, জনগণের মতের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশন অবৈধভাবে কুমিল্লার নিউ মার্কেট এলাকার মসজিদটি স্থাপন করে। যেখানে মসজিদের নাম ব্যবহার করে মার্কেট করা হলেও এতে মূলত মার্কেট হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। যা সড়কের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। এর কারণেও নিউ মার্কেট এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
ভয়াবহ লাকসাম সড়ক
নগরীর লাকসাম রোডের অবস্থা অন্য সড়কগুলো থেকেও ভিন্ন। এই সড়কের যানজট এখন নিয়মিত চিত্র। এই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এর জন্য দায়ী কয়েকটি হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে কুমিল্লা নগরের মেডিকেল সেন্টার (টাওয়ার) হসপিটাল, মেডিনোভা হসপিটাল ও সালাউদ্দিন হোটেলের কারণে মূলত যানজট সৃষ্টি হয়। মেডিকেল সেন্টার হসপিটাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের খানিকটা সামনেই রাস্তার দু'ধারে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। যেগুলো সড়ককে করেছে সংকীর্ণ ও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পূর্বে এসব অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ পার্কিং নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় নিউজ আসলেও কেউই এসবের সমাধান করতে পারেনি। এছাড়াও এই হাসপাতালে আগত রোগী, স্বজন ও শতাধিক চিকিৎসকের গাড়ি রাখার তেমন কোন স্পেস নেই। যে কারণে এসব গাড়ি সড়কের ওপর রেখেই ফেরার হন তারা। অপরদিকে সালাউদ্দিন হোটেল ও হিরাঝিল হোটেলে খাবার খেতে আসা ক্রেতাদের গাড়ি রাখার কোন স্পেস নেই। যে কারণে সড়কে রেখে খাবার খেতে চান তারা। এই সুযোগেই পুরো শহরে যানজট সৃষ্টি হয়ে যায়।
কুমিল্লার তরুণ আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এসবের কোন সমাধান হবে কিনা আদৌ জানি না। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজন আছে। আমরা যা দেখে এসেছি যদি তাই চলতে থাকে কুমিল্লা শহর একসময় বাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, শুধু জনপ্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। এটির জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও পরিকল্পিত উদ্যোগ। আমরা চাই কুমিল্লা শহর বসবাসের যোগ্য শহরে পরিণত হোক।
বাস ঢুকলেই আটকে যায় সড়ক
কুমিল্লা নগরের সড়কের সংকীর্ণতার কথা সবাই জানে। এই সংকীর্ণ সড়কে যানজট আরও তীব্র হয় যখন বাস প্রবেশ করে। এর কারণ যখন কোন বাস নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় প্রবেশ করে তখন অন্য পরিবহন যাওয়ার আর তেমন জায়গা থাকে না। যেকারণে যানজটের তীব্রতা বাড়ে কয়েকগুণ।
জানা গেছে, নগরে প্রবেশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ বাস। এছাড়া একই সময় নগরীতে প্রবেশ করে বিএআইইউএসটি, সিসিএন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ময়নামতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবহন।
সূত্রে জানা গেছে, একাধিকবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কুমিল্লা নগরে বাস প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু তা আর আলোচনার টেবিল থেকে বাস্তবে রূপ নেয়নি।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় অতিরিক্ত অটোরিকশা ও মিশুক। তাই বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। আশাকরি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ভোগান্তি কমে যাবে। তাছাড়া ঈদকে সামনে রেখেও আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নেব। এতে কুমিল্লা শহরে অটোরিকশার লাগাম টানা যাবে।