আবদুল্লাহ আল মারুফ
কুমিল্লার একটি সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে। সেখানে আছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
গতকাল বুধবার। বেলা ১২টা ছঁইছুঁই। তপ্ত রোদের মাঝে দুই কক্ষের একটি ভবন। আশপাশে নেই কোনো গাছপালা। কক্ষের ভেতরে তীব্র গরম। কক্ষ দুটিতে আছে ৫টি ইলেকট্রিক পাখা। তবে বন্ধ। বারান্দায় বসে আছে পাঁচ শিশু। তাদের মাঝে একজন বয়স্ক শিক্ষক জাকির হোসেন। শিশুরা কেউ লিখছে, কেউ পড়ছে। সবার কপালে ও শরীরে ঘাম। ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে এলোমেলো শিশুদের খেলার সরঞ্জাম। সহকারী শিক্ষক মোসা. মানছুরা আক্তার চৌধুরী। অফিস কক্ষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। স্কুলের বেহাল দশা আর নিজেরে হতাশার কথা বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, আমি পূর্বে যে স্কুলে ছিলাম তার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন। হঠাৎ করে ২০২০ সালে এই স্কুলে পোস্টিং দেয়া হয় আমাকে। আমি শক খেয়ে যাই। এসে দেখি স্কুলে শিক্ষার্থী নেই। আসল করোনা। তখন ছিল মাত্র একজন শিক্ষার্থী। এরপর আমরা এলাকা এলাকা ঘুরে ১৭জন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী থাকতে চায় না। এর মাঝে উপস্থিত হন সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফাতেহা বেগম। রোদে হেঁটে এসে তিনি হাত পাখা নিয়ে বসেন। তিনি বলেন, গত দুই বছর এই স্কুলে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। গত এক মাস আগে পানির মোটরও চুরি হয়ে যায়। টিউবওয়েলগুলোর ভেতরে স্থানীয় কিশোররা আড্ডা দিতে এসে পাথর ঢুকিয়ে দেয়, তাই কোন টিউবয়েলও নেই। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অচল স্কুলটির দুটি শৌচাগার। যে কারণে স্থানীয়দের বাড়িতে গিয়ে শৌচকাজ সারতে হয় তিন শিক্ষককে। ঠিক সময়ে শৌচাগারে না যেতে পারায় তিনজন শিক্ষকই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ফাতেহা বেগম বলেন, এই স্কুলের কোন নিরাপত্তা নেই। স্কুলের ফটকের কলাপসিবল গেটের একটি অংশ চুরি হয়। পরে আমরা আরেকটি অংশ সংরক্ষণ করি। আমাদের স্কুলের ভেতরের জিনিসপত্রও কদিন পর পর চোর নিয়ে যায়। তালার ভেতর শলা ও ময়লা ঢুকিয়ে নষ্ট করে রেখে যায়। গ্রিল কেটে নিয়ে যায়। পতাকার স্ট্যান্ডের দড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে অনেকবার। আমি আসার পর দুবার জিডি করেছি। পুলিশ এসে দেখে যায়। কিছুই উন্নতি হয় না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই বছর আগের কথা। কদিন পর পর চোর এসে বৈদ্যুতিক ক্যাবলগুলো নিয়ে যেত। আমরা বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা ঠিক করে দিয়ে যেত। একটা সময় বিরক্ত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ আর দেয়নি। তবে আমরা আবার আবেদন করেছি। তারা বলেছে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। স্কুলের বিষয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম ইকবালের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। আমি জেনেছি। পরে স্কুলটি ভিজিট করেছি। আমরা স্থানীয়দের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসব এবং কীভাবে এই স্কুলটি উঠানো যায় চেষ্টা করব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, স্কুলটির বেহালদশার কথা আমি জানি। স্কুলের শিক্ষকরা কি পরিমাণ পরিশ্রম করে তা আমি জানি। কারণ, আমি নিজে একাধিকবার গিয়েছি। সেখানে স্থানীয়দের সাথে উঠান বৈঠক করেছি। কিন্তু এরপরেও একজন অভিভাবকও কোন রেসপন্স করেনি। স্কুলটির প্রতি আমার আলাদা নজর আছে। দেখি কি করা যায়।
কুমিল্লার একটি সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে। সেখানে আছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
গতকাল বুধবার। বেলা ১২টা ছঁইছুঁই। তপ্ত রোদের মাঝে দুই কক্ষের একটি ভবন। আশপাশে নেই কোনো গাছপালা। কক্ষের ভেতরে তীব্র গরম। কক্ষ দুটিতে আছে ৫টি ইলেকট্রিক পাখা। তবে বন্ধ। বারান্দায় বসে আছে পাঁচ শিশু। তাদের মাঝে একজন বয়স্ক শিক্ষক জাকির হোসেন। শিশুরা কেউ লিখছে, কেউ পড়ছে। সবার কপালে ও শরীরে ঘাম। ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে এলোমেলো শিশুদের খেলার সরঞ্জাম। সহকারী শিক্ষক মোসা. মানছুরা আক্তার চৌধুরী। অফিস কক্ষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। স্কুলের বেহাল দশা আর নিজেরে হতাশার কথা বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, আমি পূর্বে যে স্কুলে ছিলাম তার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন। হঠাৎ করে ২০২০ সালে এই স্কুলে পোস্টিং দেয়া হয় আমাকে। আমি শক খেয়ে যাই। এসে দেখি স্কুলে শিক্ষার্থী নেই। আসল করোনা। তখন ছিল মাত্র একজন শিক্ষার্থী। এরপর আমরা এলাকা এলাকা ঘুরে ১৭জন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী থাকতে চায় না। এর মাঝে উপস্থিত হন সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফাতেহা বেগম। রোদে হেঁটে এসে তিনি হাত পাখা নিয়ে বসেন। তিনি বলেন, গত দুই বছর এই স্কুলে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। গত এক মাস আগে পানির মোটরও চুরি হয়ে যায়। টিউবওয়েলগুলোর ভেতরে স্থানীয় কিশোররা আড্ডা দিতে এসে পাথর ঢুকিয়ে দেয়, তাই কোন টিউবয়েলও নেই। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অচল স্কুলটির দুটি শৌচাগার। যে কারণে স্থানীয়দের বাড়িতে গিয়ে শৌচকাজ সারতে হয় তিন শিক্ষককে। ঠিক সময়ে শৌচাগারে না যেতে পারায় তিনজন শিক্ষকই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ফাতেহা বেগম বলেন, এই স্কুলের কোন নিরাপত্তা নেই। স্কুলের ফটকের কলাপসিবল গেটের একটি অংশ চুরি হয়। পরে আমরা আরেকটি অংশ সংরক্ষণ করি। আমাদের স্কুলের ভেতরের জিনিসপত্রও কদিন পর পর চোর নিয়ে যায়। তালার ভেতর শলা ও ময়লা ঢুকিয়ে নষ্ট করে রেখে যায়। গ্রিল কেটে নিয়ে যায়। পতাকার স্ট্যান্ডের দড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে অনেকবার। আমি আসার পর দুবার জিডি করেছি। পুলিশ এসে দেখে যায়। কিছুই উন্নতি হয় না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই বছর আগের কথা। কদিন পর পর চোর এসে বৈদ্যুতিক ক্যাবলগুলো নিয়ে যেত। আমরা বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা ঠিক করে দিয়ে যেত। একটা সময় বিরক্ত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ আর দেয়নি। তবে আমরা আবার আবেদন করেছি। তারা বলেছে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। স্কুলের বিষয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম ইকবালের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। আমি জেনেছি। পরে স্কুলটি ভিজিট করেছি। আমরা স্থানীয়দের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসব এবং কীভাবে এই স্কুলটি উঠানো যায় চেষ্টা করব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, স্কুলটির বেহালদশার কথা আমি জানি। স্কুলের শিক্ষকরা কি পরিমাণ পরিশ্রম করে তা আমি জানি। কারণ, আমি নিজে একাধিকবার গিয়েছি। সেখানে স্থানীয়দের সাথে উঠান বৈঠক করেছি। কিন্তু এরপরেও একজন অভিভাবকও কোন রেসপন্স করেনি। স্কুলটির প্রতি আমার আলাদা নজর আছে। দেখি কি করা যায়।