ড. জি এম মনিরুজ্জামান
বাঙালি সংস্কৃতি ও উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা নববর্ষ। বাংলা সনের প্রথম দিন হিসেবে পহেলা বৈশাখ দিবসটি বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালিদের নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো পহেলা বৈশাখ। স্মরণাতীতকাল হতে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির সর্বজনীন ও বছরের সর্ববৃহৎ একান্ত নিজস্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালি জাতি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানারকম সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে থাকে । মুসলিম-হিন্দু- খ্রিস্টান-বৌদ্ধ- উপজাতি-আদিবাসী- অউপজাতি বিভিন্ন সম্প্রদায় বাংলাদেশে যেসব পারিবারিক ও সামাজিক উৎসব পালন করে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলা নববর্ষ। এছাড়াও পালিত হয় হালখাতা, পাহাড়িদের বৈসাবি, পুণ্যাহ, বিবাহ, খানা, ঈদ, জন্মদিন, নবান্ন, শ্রাদ্ধ, অন্নপ্রাশন, পৌষ পার্বণ, জামাইষষ্ঠী, প্রাতঃশান, অরণ্যষষ্ঠী, চতুমাস্যি ব্রত, মনসাপূজা, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, শীতলাপূজা, বারুণী স্নান প্রভৃতি। এর মধ্যে বাৎসরিক ব্রত অনুষ্ঠানগুলোও উল্লেখযোগ্য। এ জাতীয় উৎসব সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন : ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী। উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের মনে একত্র হয়ে বৃহৎ; সেদিন সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করে সে মহৎ।'বাংলা নববর্ষ বর্তমান বাঙালি জাতির নিকট প্রধান জাতীয় এবং সামাজিক উৎসব। পৃথিবীতে প্রথম নতুন বছর বা নববর্ষ পালন হয় মেসোপটেমিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির হিসেবে ইউরোপীয়) নববর্ষ পালনের ইতিহাস পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে। জুলিয়াস সিজার বাৎসরিক ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। বর্তমানে প্রচলিত জানুয়ারি মাসকেই প্রথম মাস হিসেবে তিনি ধার্য করেন। তখন থেকেই বেশ জাঁকজমক ও আনন্দোল্লাসের সাথে নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে। নববর্ষ প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবনকে নতুন ভাবে প্রেরণা যোগায়। আনন্দে জীবন হয় উদ্দীপ্ত। সেদিক থেকে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন বাঙালি জাতির জীবনে বয়ে আনে এক অখণ্ড আনন্দের শিহরন।
১৫৫৬ সালে সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল শুরু হয় (রাজত্বকাল ১৫৫৬-১৬০৫)। সম্রাট আকবর সিংহাসন আরোহণের ২৯ বছর পর অগ্রহায়ণ মাসকে বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।
'সন' শব্দটি আরবি এবং যার অর্থ বর্ষপঞ্জি বা বছরের দিনক্ষণের হিসাব । পূর্বে অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের নিকট হতে খাজনা আদায় করা হতো। সম্রাট আকবর তাঁর রাজসভার নবরত্নের বাইরে ১০ম রত্ন আমীর ফতেহ্উল্লাহ্ সিরাজীকে বাংলা সন আবিষ্কারের দায়িত্ব দেন। ৯৯২ হিজরি বা ১৫৮৪ সালকে বিজ্ঞ রাজজ্যোতিষী এবং পণ্ডিত ফতেহ্উল্লাহ্ সিরাজী গবেষণার মাধ্যমে বাংলা সনের গননা নির্ধারণ করেন। ফতেহ্উল্লাহ্ মূলত ৯৬৩ হিজরি অর্থাৎ ৯৬৩ সনকে সমন্বয় করে বাংলা সন গণনা করা শুরু করেন। ৯৬৩ হিজরি সমান ১৫৫৬ সালে ১১ এপ্রিল সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণ অর্থাৎ ১ বৈশাখ, ৯৬৩ বাংলা সন। ১০ মার্চ ১৫৮৫ সালে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়। আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে সে সন হিসাব করা হয়।
ধর্ম ও বর্ণের সকল শ্রেণির মানুষের মিলন-বন্ধনের মধ্য দিয়ে এদেশের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এই সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে মানুষ পালন করে আসছে। যার উদ্দেশ্য হলো সত্য ও সৌন্দর্যকে ভালোবেসে আনন্দ উপভোগ করা। অতীত মানব জাতির আচার-আচরণ ইতিহাস থেকেই উপকরণাদি সংগ্রহ করে সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতেই গড়ে উঠেছে লোকঐতিহ্য, যা স্থায়ী হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যকে ধারণের মূল হয়ে উঠে এসেছে বাংলা নববর্ষ। আর সম্রাট আকবরের শাসনামলে হিজরি সাল নিয়ে কৃতকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে গুরুতর অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধা দূর করে কৃষকদের নিকট থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বঙ্গদেশে এ জাতীয় পৃথক সন প্রবর্তন করা হতো। উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও এর মূলে ছিল অর্থনীতি।
পূর্ব-বাংলায় বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতো প্রায় প্রাচীনকাল থেকে। তখন তা ছিল 'আমানি' উৎসব নামে পরিচিত। ড. মুহম্মদ এনামুল হক আদি এই আমানি উৎসব সম্পর্কে বলেন, আমানি উৎসবের লক্ষ্য ছিল সমস্ত বছরের শান্তি কামনা। সুখ-সমৃদ্ধি এবং উৎকৃষ্ট ফসল ফলনের আশা-আকাঙ্ক্ষার কামনা। এটি কৃষকদের উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে কৃষাণি ঘরে একটি নতুন ঘটে আতপ চাল পানিতে ভিজিয়ে রেখে তাতে আমগাছের কচি পাতার ডাল রাখত। সারা বছরের মঙ্গল
কামনায় পরদিন সকালে ঘর পরিশুদ্ধ করতে এই ঘট হতে ডালটি উঠিয়ে পাতার পানি ঘরের চারদিকে ছিটিয়ে দিত। এমনকি কৃষক জমিতে যাওয়ার প্রাক্কালে এই পানি তার শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হতো, যাতে কৃষক বেশি পরিমাণে ফসল
ফলাতে পারে। আবার পুণাকাজ অনুষ্ঠানের পক্ষে জ্যোতিষ শাস্ত্রানুসারে শুভদিন হলো 'পুণ্যাহ' বা শুভদিনের অনুষ্ঠান। 'পুণ্যাহ' শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হলো জমিদার কর্তৃক প্রজাদের নিকট হতে নতুন বছরের
খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠানসূচক প্রারম্ভিক দিন। একসময় বৈশাখের শুরুর দিন হতে সারামাস জুড়ে বড় বড় জমিদার ও তালুকদার বাড়ির কাছারিতে প্রজারা সাধ্যমতো ভালো কাপড় পরিধান করে পুরোপুরি বা আংশিক খাজনা পরিশোধ করতে আসত। তখন পান-সুপারি ও মিষ্টি দিয়ে প্রজাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হতো। ফলে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রজা ও জমিদারের দূরত্ব কমে সুসম্পর্ক গড়ে উঠত। এ সময়ে উভয়ে উভয়েরই কুশলাদি বিনিময় ও খোঁজখবর নিতো। ফলে পুণ্যাহ ছিল একটি অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে ক্রমান্বয়ে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানও এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয় ।
ইংরেজ শাসনামল হতে প্রায় বর্তমানকাল পর্যন্ত জমি-জমার দলিলপত্র ও খাজনা আদায়ের ব্যাপারে বাংলা সন-ই ছিল হিসেবের মাধ্যম। উনিশ শতকের শেষ দিকে ইংরেজ শাসনামলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার পাশ্চাত্য নববর্ষের অনুসরণে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা করেন। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেন। এভাবে কলকাতায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে ধীরে ধীরে বাংলা নববর্ষ উদ্দীপনা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পালিত হতে থাকে।
হালখাতা নববর্ষের একটি সার্বজনীন অনুষ্ঠান এবং আচনীয় রীতি। লোকসাহিত্য বিশেষজ্ঞ ড. আশরাফ সিদ্দিকীর মতে, হালখাতার সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক দিকটি যত ঘনিষ্ঠ, আনন্দ উৎসব ততটা নয়। দেশের কিছু ব্যবসায়ী দেশিয় রীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসেব পরিচালনা করেন, যাঁরা মূলত হালখাতা অনুষ্ঠান পালন করেন। পহেলা বৈশাখের আগের দিন তাঁরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন । পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকে হিসেব চুকিয়ে পুরোনো বছরের বকেয়া আদায় করেন। হালখাতার তালিকায় দেনা থাকাটা অসম্মানজনক মনে করে কেউ ইচ্ছাকৃত পুরাতন দেনা বাঁকি রাখতে চান না। এ দিন মিষ্টান্ন খাইয়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন উদ্যমে নতুন বছরের নতুন চারুকলা ইনস্টিটিউট, দেশের পাবলিক যাত্রা মহানন্দে শুরু হয়।
সব ধর্ম ও বর্ণের সংগ্রামমুখর ও কর্মক্লান্ত মানুষ জীবনের নিরানন্দ অনুভূতিকে আনন্দপূর্ণ করতে সার্বজনীন জাতীয় উৎসব পালন করে। বাংলা নববর্ষের মধ্যে অন্যতম প্রধান উৎসব। মানুষের সামাজিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের নিপুণতা রক্ষার্থে এই সংস্কৃতি পালনের ধারাকে উৎসব-আনন্দে মুখর করে তোলা হয়। ফলে রচিত হতে থাকে সংগীত, নৃত্য, পট, চিত্র প্রভৃতি। নব নব সৃষ্টির প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে বাংলা নববর্ষ-যা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মিলনের উৎস রূপান্তরিত হয় মিলনমেলায়।
উল্লেখ্য, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পাশাপাশি রাজনৈতিক আন্দোলনেও পহেলা বৈশাখ এক নতুন মাত্রা যোগ করে । যেমন পাকিস্তান শাসনামলে আইয়ুব খানের সরকার রবীন্দ্রসংগীত এবং বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার বিরোধিতা করলে এর প্রতিবাদস্বরূপ বৈশাখের প্রথম দিনে ‘ছায়ানট' গোষ্ঠী রমনার বটমূলে নববর্ষ আয়োজন করেছিল। পালনের স্বাধীনতাপরবর্তীকালে এভাবে সংস্কৃতি অঙ্গনে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়।
বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে গ্রাম, গঞ্জ, শহর, বন্দর সাংস্কৃতিক উৎসবে মেতে
ওঠে। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনার বটমূলে ছায়ানট,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা, স্কুল- কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। তারা লোকজ চিত্রকলা আঁকে, পশু-পাখির মুখোশ তৈরি করে নানাসাজে নানাভাবে বৈচিত্র্যময় বৈশাখী র্যালিতে অংশ নিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো' সংগীতানুষ্ঠান ও জাতীয় চেতনামূলক আলোচনা সভার মাধ্যমে তারা নববর্ষকে বরণ করে নেয় । সকালে পান্তাভাত-ইলিশ খাওয়া, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা ও ছড়া পাঠের আসর, বইমেলার আয়োজন, সারাদেশে সময়ভেদে নানাবর্ণের ছোটবড় মেলা, মেলা থেকে সাংসারিক দ্রব্যাদি কেনা, কুটির শিল্পজাত দ্রব্যের সমাগম, আনন্দের লক্ষ্যে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন, পুতুলনাচ, সার্কাস, চট্টগ্রামের বলীখেলা প্রভৃতি বিনোদনের উপকরণ হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগান ও লোকনতকদের উপস্থিতি মেলায় লক্ষ করা যায়। মেলায় গম্ভীরা গান, গাজীর গান, আলকাপ গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত, বাউল-মারফতি- মুর্শিদি- ভাটিয়ালি ইত্যাদি আঞ্চলিক গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুন দিনের গৌরবে বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতিকে প্রতিদিনকার জীবন-যাপন থেকে মুক্তির বার্তা বয়ে আনে। বাংলা নববর্ষ তাই সত্য, মঙ্গল ও নির্ভীক মহত্ত্বের গৌরবে উদ্ভাসিত।
বাংলাদেশে আরও দুইটি নববর্ষ পালিত হয়। এর একটি ইউরোপীয় নববর্ষ এবং অপরটি আরবি নববর্ষ। তবে এ দুইটির তুলনায় বাংলা নববর্ষ বাঙালি জীবনে গভীর তাৎপর্যবহ। বাৎসরিক কর্মপ্রবাহে বাংলা নববর্ষ বাঙালির জজীবনযাত্রা, উৎসব-অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শুভ কর্মসম্পাদন, খাজনা পরিশোধ প্রভৃতি দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো এখনও দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাংলা সনের দিন-তারিখ বা তিথি-নক্ষত্র অনুসারে পালন করে আসছে। তাছাড়া সবাই মিলে বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করে সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলে। বর্তমানে দিবসটি উৎসব হিসেবে পালিত হলেও এর সন-তারিখ নির্ধারণে একটি সমস্যা দেখা যায়। দেখা যায়, কেউ-বা বাংলা একাডেমির বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে; কেউ-বা লোকনাথ পঞ্জিকার সাথে সমন্বয় রাখে; কোনো পঞ্জিকায় দেখা যায় ঢাকার তারিখ; আবার কোনো পঞ্জিকায় পশ্চিমবঙ্গের তারিখ: কোনোটিতে আবার পুরোনো নিয়মের তারিখ ব্যবহৃত হয়। ফলে অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয়। একটি শক্তিশালী ও সর্বগ্রহণযোগ্য বাংলা সন সংস্কারক কমিটি গঠন করে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।
ড. জি এম মনিরুজ্জামান: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাঙালি সংস্কৃতি ও উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা নববর্ষ। বাংলা সনের প্রথম দিন হিসেবে পহেলা বৈশাখ দিবসটি বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালিদের নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো পহেলা বৈশাখ। স্মরণাতীতকাল হতে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির সর্বজনীন ও বছরের সর্ববৃহৎ একান্ত নিজস্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালি জাতি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানারকম সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে থাকে । মুসলিম-হিন্দু- খ্রিস্টান-বৌদ্ধ- উপজাতি-আদিবাসী- অউপজাতি বিভিন্ন সম্প্রদায় বাংলাদেশে যেসব পারিবারিক ও সামাজিক উৎসব পালন করে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলা নববর্ষ। এছাড়াও পালিত হয় হালখাতা, পাহাড়িদের বৈসাবি, পুণ্যাহ, বিবাহ, খানা, ঈদ, জন্মদিন, নবান্ন, শ্রাদ্ধ, অন্নপ্রাশন, পৌষ পার্বণ, জামাইষষ্ঠী, প্রাতঃশান, অরণ্যষষ্ঠী, চতুমাস্যি ব্রত, মনসাপূজা, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, শীতলাপূজা, বারুণী স্নান প্রভৃতি। এর মধ্যে বাৎসরিক ব্রত অনুষ্ঠানগুলোও উল্লেখযোগ্য। এ জাতীয় উৎসব সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন : ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী। উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের মনে একত্র হয়ে বৃহৎ; সেদিন সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করে সে মহৎ।'বাংলা নববর্ষ বর্তমান বাঙালি জাতির নিকট প্রধান জাতীয় এবং সামাজিক উৎসব। পৃথিবীতে প্রথম নতুন বছর বা নববর্ষ পালন হয় মেসোপটেমিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির হিসেবে ইউরোপীয়) নববর্ষ পালনের ইতিহাস পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে। জুলিয়াস সিজার বাৎসরিক ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। বর্তমানে প্রচলিত জানুয়ারি মাসকেই প্রথম মাস হিসেবে তিনি ধার্য করেন। তখন থেকেই বেশ জাঁকজমক ও আনন্দোল্লাসের সাথে নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে। নববর্ষ প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবনকে নতুন ভাবে প্রেরণা যোগায়। আনন্দে জীবন হয় উদ্দীপ্ত। সেদিক থেকে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন বাঙালি জাতির জীবনে বয়ে আনে এক অখণ্ড আনন্দের শিহরন।
১৫৫৬ সালে সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল শুরু হয় (রাজত্বকাল ১৫৫৬-১৬০৫)। সম্রাট আকবর সিংহাসন আরোহণের ২৯ বছর পর অগ্রহায়ণ মাসকে বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।
'সন' শব্দটি আরবি এবং যার অর্থ বর্ষপঞ্জি বা বছরের দিনক্ষণের হিসাব । পূর্বে অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের নিকট হতে খাজনা আদায় করা হতো। সম্রাট আকবর তাঁর রাজসভার নবরত্নের বাইরে ১০ম রত্ন আমীর ফতেহ্উল্লাহ্ সিরাজীকে বাংলা সন আবিষ্কারের দায়িত্ব দেন। ৯৯২ হিজরি বা ১৫৮৪ সালকে বিজ্ঞ রাজজ্যোতিষী এবং পণ্ডিত ফতেহ্উল্লাহ্ সিরাজী গবেষণার মাধ্যমে বাংলা সনের গননা নির্ধারণ করেন। ফতেহ্উল্লাহ্ মূলত ৯৬৩ হিজরি অর্থাৎ ৯৬৩ সনকে সমন্বয় করে বাংলা সন গণনা করা শুরু করেন। ৯৬৩ হিজরি সমান ১৫৫৬ সালে ১১ এপ্রিল সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণ অর্থাৎ ১ বৈশাখ, ৯৬৩ বাংলা সন। ১০ মার্চ ১৫৮৫ সালে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়। আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে সে সন হিসাব করা হয়।
ধর্ম ও বর্ণের সকল শ্রেণির মানুষের মিলন-বন্ধনের মধ্য দিয়ে এদেশের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এই সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে মানুষ পালন করে আসছে। যার উদ্দেশ্য হলো সত্য ও সৌন্দর্যকে ভালোবেসে আনন্দ উপভোগ করা। অতীত মানব জাতির আচার-আচরণ ইতিহাস থেকেই উপকরণাদি সংগ্রহ করে সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতেই গড়ে উঠেছে লোকঐতিহ্য, যা স্থায়ী হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যকে ধারণের মূল হয়ে উঠে এসেছে বাংলা নববর্ষ। আর সম্রাট আকবরের শাসনামলে হিজরি সাল নিয়ে কৃতকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে গুরুতর অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধা দূর করে কৃষকদের নিকট থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বঙ্গদেশে এ জাতীয় পৃথক সন প্রবর্তন করা হতো। উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও এর মূলে ছিল অর্থনীতি।
পূর্ব-বাংলায় বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতো প্রায় প্রাচীনকাল থেকে। তখন তা ছিল 'আমানি' উৎসব নামে পরিচিত। ড. মুহম্মদ এনামুল হক আদি এই আমানি উৎসব সম্পর্কে বলেন, আমানি উৎসবের লক্ষ্য ছিল সমস্ত বছরের শান্তি কামনা। সুখ-সমৃদ্ধি এবং উৎকৃষ্ট ফসল ফলনের আশা-আকাঙ্ক্ষার কামনা। এটি কৃষকদের উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে কৃষাণি ঘরে একটি নতুন ঘটে আতপ চাল পানিতে ভিজিয়ে রেখে তাতে আমগাছের কচি পাতার ডাল রাখত। সারা বছরের মঙ্গল
কামনায় পরদিন সকালে ঘর পরিশুদ্ধ করতে এই ঘট হতে ডালটি উঠিয়ে পাতার পানি ঘরের চারদিকে ছিটিয়ে দিত। এমনকি কৃষক জমিতে যাওয়ার প্রাক্কালে এই পানি তার শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হতো, যাতে কৃষক বেশি পরিমাণে ফসল
ফলাতে পারে। আবার পুণাকাজ অনুষ্ঠানের পক্ষে জ্যোতিষ শাস্ত্রানুসারে শুভদিন হলো 'পুণ্যাহ' বা শুভদিনের অনুষ্ঠান। 'পুণ্যাহ' শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হলো জমিদার কর্তৃক প্রজাদের নিকট হতে নতুন বছরের
খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠানসূচক প্রারম্ভিক দিন। একসময় বৈশাখের শুরুর দিন হতে সারামাস জুড়ে বড় বড় জমিদার ও তালুকদার বাড়ির কাছারিতে প্রজারা সাধ্যমতো ভালো কাপড় পরিধান করে পুরোপুরি বা আংশিক খাজনা পরিশোধ করতে আসত। তখন পান-সুপারি ও মিষ্টি দিয়ে প্রজাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হতো। ফলে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রজা ও জমিদারের দূরত্ব কমে সুসম্পর্ক গড়ে উঠত। এ সময়ে উভয়ে উভয়েরই কুশলাদি বিনিময় ও খোঁজখবর নিতো। ফলে পুণ্যাহ ছিল একটি অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে ক্রমান্বয়ে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানও এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয় ।
ইংরেজ শাসনামল হতে প্রায় বর্তমানকাল পর্যন্ত জমি-জমার দলিলপত্র ও খাজনা আদায়ের ব্যাপারে বাংলা সন-ই ছিল হিসেবের মাধ্যম। উনিশ শতকের শেষ দিকে ইংরেজ শাসনামলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার পাশ্চাত্য নববর্ষের অনুসরণে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা করেন। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেন। এভাবে কলকাতায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে ধীরে ধীরে বাংলা নববর্ষ উদ্দীপনা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পালিত হতে থাকে।
হালখাতা নববর্ষের একটি সার্বজনীন অনুষ্ঠান এবং আচনীয় রীতি। লোকসাহিত্য বিশেষজ্ঞ ড. আশরাফ সিদ্দিকীর মতে, হালখাতার সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক দিকটি যত ঘনিষ্ঠ, আনন্দ উৎসব ততটা নয়। দেশের কিছু ব্যবসায়ী দেশিয় রীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসেব পরিচালনা করেন, যাঁরা মূলত হালখাতা অনুষ্ঠান পালন করেন। পহেলা বৈশাখের আগের দিন তাঁরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন । পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকে হিসেব চুকিয়ে পুরোনো বছরের বকেয়া আদায় করেন। হালখাতার তালিকায় দেনা থাকাটা অসম্মানজনক মনে করে কেউ ইচ্ছাকৃত পুরাতন দেনা বাঁকি রাখতে চান না। এ দিন মিষ্টান্ন খাইয়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন উদ্যমে নতুন বছরের নতুন চারুকলা ইনস্টিটিউট, দেশের পাবলিক যাত্রা মহানন্দে শুরু হয়।
সব ধর্ম ও বর্ণের সংগ্রামমুখর ও কর্মক্লান্ত মানুষ জীবনের নিরানন্দ অনুভূতিকে আনন্দপূর্ণ করতে সার্বজনীন জাতীয় উৎসব পালন করে। বাংলা নববর্ষের মধ্যে অন্যতম প্রধান উৎসব। মানুষের সামাজিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের নিপুণতা রক্ষার্থে এই সংস্কৃতি পালনের ধারাকে উৎসব-আনন্দে মুখর করে তোলা হয়। ফলে রচিত হতে থাকে সংগীত, নৃত্য, পট, চিত্র প্রভৃতি। নব নব সৃষ্টির প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে বাংলা নববর্ষ-যা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মিলনের উৎস রূপান্তরিত হয় মিলনমেলায়।
উল্লেখ্য, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পাশাপাশি রাজনৈতিক আন্দোলনেও পহেলা বৈশাখ এক নতুন মাত্রা যোগ করে । যেমন পাকিস্তান শাসনামলে আইয়ুব খানের সরকার রবীন্দ্রসংগীত এবং বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার বিরোধিতা করলে এর প্রতিবাদস্বরূপ বৈশাখের প্রথম দিনে ‘ছায়ানট' গোষ্ঠী রমনার বটমূলে নববর্ষ আয়োজন করেছিল। পালনের স্বাধীনতাপরবর্তীকালে এভাবে সংস্কৃতি অঙ্গনে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়।
বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে গ্রাম, গঞ্জ, শহর, বন্দর সাংস্কৃতিক উৎসবে মেতে
ওঠে। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনার বটমূলে ছায়ানট,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা, স্কুল- কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। তারা লোকজ চিত্রকলা আঁকে, পশু-পাখির মুখোশ তৈরি করে নানাসাজে নানাভাবে বৈচিত্র্যময় বৈশাখী র্যালিতে অংশ নিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো' সংগীতানুষ্ঠান ও জাতীয় চেতনামূলক আলোচনা সভার মাধ্যমে তারা নববর্ষকে বরণ করে নেয় । সকালে পান্তাভাত-ইলিশ খাওয়া, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা ও ছড়া পাঠের আসর, বইমেলার আয়োজন, সারাদেশে সময়ভেদে নানাবর্ণের ছোটবড় মেলা, মেলা থেকে সাংসারিক দ্রব্যাদি কেনা, কুটির শিল্পজাত দ্রব্যের সমাগম, আনন্দের লক্ষ্যে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন, পুতুলনাচ, সার্কাস, চট্টগ্রামের বলীখেলা প্রভৃতি বিনোদনের উপকরণ হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগান ও লোকনতকদের উপস্থিতি মেলায় লক্ষ করা যায়। মেলায় গম্ভীরা গান, গাজীর গান, আলকাপ গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত, বাউল-মারফতি- মুর্শিদি- ভাটিয়ালি ইত্যাদি আঞ্চলিক গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুন দিনের গৌরবে বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতিকে প্রতিদিনকার জীবন-যাপন থেকে মুক্তির বার্তা বয়ে আনে। বাংলা নববর্ষ তাই সত্য, মঙ্গল ও নির্ভীক মহত্ত্বের গৌরবে উদ্ভাসিত।
বাংলাদেশে আরও দুইটি নববর্ষ পালিত হয়। এর একটি ইউরোপীয় নববর্ষ এবং অপরটি আরবি নববর্ষ। তবে এ দুইটির তুলনায় বাংলা নববর্ষ বাঙালি জীবনে গভীর তাৎপর্যবহ। বাৎসরিক কর্মপ্রবাহে বাংলা নববর্ষ বাঙালির জজীবনযাত্রা, উৎসব-অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শুভ কর্মসম্পাদন, খাজনা পরিশোধ প্রভৃতি দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো এখনও দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাংলা সনের দিন-তারিখ বা তিথি-নক্ষত্র অনুসারে পালন করে আসছে। তাছাড়া সবাই মিলে বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করে সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলে। বর্তমানে দিবসটি উৎসব হিসেবে পালিত হলেও এর সন-তারিখ নির্ধারণে একটি সমস্যা দেখা যায়। দেখা যায়, কেউ-বা বাংলা একাডেমির বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে; কেউ-বা লোকনাথ পঞ্জিকার সাথে সমন্বয় রাখে; কোনো পঞ্জিকায় দেখা যায় ঢাকার তারিখ; আবার কোনো পঞ্জিকায় পশ্চিমবঙ্গের তারিখ: কোনোটিতে আবার পুরোনো নিয়মের তারিখ ব্যবহৃত হয়। ফলে অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয়। একটি শক্তিশালী ও সর্বগ্রহণযোগ্য বাংলা সন সংস্কারক কমিটি গঠন করে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।
ড. জি এম মনিরুজ্জামান: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।