বাড়ির কাছে কম সময়ে ঘুরার স্পট নিয়ে ভাবছেন? একদম চিন্তা না করেই এবারের ঈদের লম্বা ছুটির একটি অংশ কাজে লাগাতে ভ্রমণপিপাসুরা কুমিল্লাকে বেছে নিতে পারেন। এখানকার এক কোটবাড়ি এলাকা ঘিরে আছে নানা ধরনের স্পট। আছে লালমাই পাহাড়ের মনোলোভা দৃশ্য। বর্ষায় এখানে সবুজের সমারোহ আপনাকে দারুণভাবে মোহিত করবে। এই এলাকায় গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন পার্ক। যেখানে সাঁতার কাটা, থাকা খাওয়া ও বিভিন্ন রাইডে চড়ার আনন্দও পাবেন। ডাইনোসরের আওয়াজও শুনতে পাবেন। নারী পুরুষ, শিশুদের নিয়ে একসঙ্গে সব ধরনের বিনোদনের অপার সুযোগও আছে এখানে। আছে শালবন বিহারের মতো নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। চা বাগান। উদ্ভিদউদ্যান। বিকেলে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ও উঁচু টিলা, ত্রিপুরা পল্লী ঘুরে মুগ্ধতার আবেশে জড়াবেন। ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত পিকনিক স্পটগুলোও।

এদিকে কোটবাড়িতে বেড়ানোর পর কুমিল্লা শহরে এলে ধর্মসাগর, বিভিন্ন দিঘি, গোমতী নদী, নগর উদ্যান, রাণীরকুটির আপনাকে দুদণ্ড শান্তি দেবে। সেনানিবাস এলাকার রূপসাগর, ওয়্যার সিমেট্রি ও ময়নামতির রানির বাঙলোও ঘোরা যাবে অনায়াসে।

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ৫,৬ ও ৭ জুন ময়নামতি জাদুঘর ও শালবনবিহার বন্ধ থাকবে। ৮ জুন ঈদের পরদিন থেকে শালবন বিহার খোলা থাকবে। তবে ৮,৯ ও ১০ জুন ময়নামতি জাদুঘর বন্ধ থাকবে। শালবন বিহারে প্রবেশ ফি ৩০ টাকা, জাদুঘরে প্রবেশ ফি ৩০ টাকা। ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফি ১০ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের প্রবেশ ফি ২০০ টাকা ও সার্কভুক্ত ছাড়া অন্যদেশের নাগরিকদের প্রবেশ ফি ৪০০ টাকা করে জনপ্রতি। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত শালবন বিহার ও জাদুঘর খোলা থাকবে।

শালবন বিহারের অদূরে লালমাই উদ্ভিদউদ্যান। যা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত। এই বর্ষায় গাছের পাতাগুলো সতেজ ও সবুজ দেখা যাচ্ছে। সেখানে আছে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ। উঁচু নিঁচু টিলার ফাঁকে নানা ধরনের গাছ। আছে জীববৈচিত্র্যেও অভয়ারণ্য। সামাজিক বনবিভাগ এই উদ্যানে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করেছে ৩০ টাকা । শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ টাকা।

লালমাই উদ্ভিদউদ্যান পেরিয়ে পশ্চিম উত্তরে গেলে ব্লুওয়াটার পার্ক। এই পার্কে প্রবেশ ফি ১৫০ ও ৩০০ টাকা করে। এখানে ঢুকতেই চোখে পড়বে ইট কংক্রিটের তৈরি বিশাল আপেল। আছে পানির মধ্যে নৌকায় বসে আড্ডা দেওয়ার সুন্দর জায়গা। হিম হিম ঠান্ডায় ভালো লাগবে। লেক পেরিয়ে এগুলে সুইমিংপুল। আছে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রাইড। লালমাই পাহাড়ের কোলে এই পার্ক।

এরপর দক্ষিণে কিছুদূর গেলেই ডাইনোপার্ক। দেশের প্রথম ডাইনোপার্ক এটি। সেখানে পাঁচটি কৃত্রিম ডাইনোসোর আছে। ক্ষণে ক্ষণে আওয়াজ দেয়। আপনার মন ভালো লাগবে। পাহাড়ের উঁচু নিঁচু টিলায় এই পার্ক অবস্থিত। প্রবেশ ফি ২০০ টাকা।

লালমাই পাহাড়ের সুন্দর পার্ক ম্যাজিক প্যারাডাইস। এখানে বিভিন্ন ধরনের রাউড আছে। সাঁতার কাটার ব্যবস্থা আছে। ভেতরে ঘোরার ও থাকার ব্যবস্থাও আছে। প্রবেশ ফি ৩০০ টাকা। বিভিন্ন রাইডে চড়ার আলাদা ফি।

এদিকে ব্যক্তিগত বাহন অথবা দলবেঁধে আসলে লালমাই পাহাড়ের রতনপুর ধর্মপুর এলাকার চা বাগান, চন্ডীমুড়ার মন্দির, বিজয়পুরের মৃৎশিল্প, রাজেশপুর ইকোপার্কও আপনার ভালো লাগবে।

জানতে চাইলে ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, কুমিল্লা ইতিহাস ঐতিহ্যের এক জেলা। এক লালমাই পাহাড়েই ঘুরলেই আপনার মন ভরে যাবে। এখানে পুরাকীর্তি , প্রত্নসম্পদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। আছে সবুজ আর সবুজ। বার্ডও লালমাই পাহাড়ের কোলে। বার্ডের বৃক্ষরাজি, বনকুটির খুবই মনোমুগ্ধকর। এবারের ঈদে পর্যটকদের জন্য কুমিল্লা বেড়ানোর সুন্দর জায়গা হতে পারে।