নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৮৯ সালের ২৬ জুলাই। এদিন আমার স্বামী কাজী আবু তাহের মারা যান। তখন আমার তিন সন্তানেরা যথাক্রমে নবম, ষষ্ঠ ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। একদিকে স্বামীর প্রয়ান, অন্যদিকে তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি। তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, তিন সন্তানকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করব। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ সংগ্রাম। এখন ওদের একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন নামকরা সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক ও আরেক জন ব্যবসায়ী। ওদের উন্নতি ও কর্মযজ্ঞ দেখে আমি অহর্নিশ খুশি হই। বলছিলেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার তলাগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শামছুন নাহার বেগম (৬৯) ।
তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, একমাত্র মেয়ে কাজী শিরিন আক্তার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞ সার্জন। বড় ছেলে কাজী আশরাফ সিদ্দিকী সাব্বির স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বরুড়া বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
শামছুন নাহার বেগমের দাবি, কণ্টকিত পথ মাড়িয়ে এখন তিনি স্বস্তিতে আছেন। একজন মা, একজন নারী হিসেবে নিজের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্বিত তিনি ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার বেলভুজ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শামছুন নাহার বেগম। বাবা আলী মিয়া ও মা হায়াতুনেচ্ছার প্রথম কন্যা সন্তান। ছয়ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। তাঁর বাবা বরুড়া বাজারে ব্যবসা করতেন। পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। তখন সবাই মেয়েকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় শামছুন নাহার বেগম পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছেন। ১৯৬৮ সালে কাদবা তলগ্রাম তরিণী চরণ লাহা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক এবং ১৯৭০ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৩ সালে কাদবা তলগ্রাম তরিণী চরণ লাহা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাজী আবু তাহেরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর বিদ্যালয়ের আবাসিক কোয়াটাওে থাকতেন। এরপর তিনি দুই বছর বরুড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি) শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৬ সালে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে সরকারি চাকরি পান। পরে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৮০ সালে বরুড়া শহীদস্মৃতি সরকারি কলেজের পশ্চিম পাশে জায়গা কেনেন। এক পর্যায়ে তাঁর স্বামী শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যবসায় মনোযোগী হন। ১৯৮৮ সালের দিকে তাঁর স্বামী কাজী আবু তাহেরের ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ২৬ জুলাই তিনি মারা যান। ২০০৪ সালে শামছুন নাহার বেগম চাকরি থেকে অবসরে যান।
শামছুন নাহার বেগম বলেন, ' স্বামীর মৃত্যুর পর চারদিকে ঘোর অন্ধকার দেখছি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। তখন মন কে শক্ত করলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে করেই হোক সন্তানদের পড়াশোনা করে মানুষ করব। পরিবার ও নানাজনের নানা কথার মধ্য দিয়ে সামান্য বেতনের চাকরির টাকা দিয়ে পথচলা শুরু আমার। একদিকে চাকরি, অন্যদিকে রান্না করা। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো, সবসময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কাজ কওে সন্তানদের পড়াশোনা তদারকি করা সবই একাই সামলাতে হয়েছে। তার উপর আলাদা বাড়িতে থাকছি, নানা ধরনের দুশ্চিন্তায়ও তখন ভয় করতো। এক পর্যায়ে বড় ছেলে সাব্বির (কাজী আশরাফ সিদ্দিকী) বিএ পাস করে একদিন বলল, 'মা আমি ব্যবসা করতে চাই। আপনি আর কতো টানবেন। ছোট দুভাই বোন কে মানুষ করতে হবে। এরপর সাব্বির ব্যবসায় হাল ধরল। আমাকে বড় ছেলে সর্বাত্নক সহযোগিতা করল। আমার নজরদারির কারণে একমাত্র মেয়ে শিরিন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেল। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্কসসহ উত্তীর্ণ হল। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে। ছোট ছেলে কাজী ওমর সিদ্দিকী পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেল। এসএসসিতে স্টার মার্কস প্রথম বিভাগ পেল । পরে রানা (কাজী ওমর সিদ্দিকী) নটরডেম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের বাকিংহামশায়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে মাস্টার্স করে। পরবর্তীতে ওরা আরও ডিগ্রি নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এখন তাঁরা প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী।
১৯৮৯ সালের ২৬ জুলাই। এদিন আমার স্বামী কাজী আবু তাহের মারা যান। তখন আমার তিন সন্তানেরা যথাক্রমে নবম, ষষ্ঠ ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। একদিকে স্বামীর প্রয়ান, অন্যদিকে তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি। তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, তিন সন্তানকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করব। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ সংগ্রাম। এখন ওদের একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন নামকরা সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক ও আরেক জন ব্যবসায়ী। ওদের উন্নতি ও কর্মযজ্ঞ দেখে আমি অহর্নিশ খুশি হই। বলছিলেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার তলাগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শামছুন নাহার বেগম (৬৯) ।
তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, একমাত্র মেয়ে কাজী শিরিন আক্তার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞ সার্জন। বড় ছেলে কাজী আশরাফ সিদ্দিকী সাব্বির স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বরুড়া বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
শামছুন নাহার বেগমের দাবি, কণ্টকিত পথ মাড়িয়ে এখন তিনি স্বস্তিতে আছেন। একজন মা, একজন নারী হিসেবে নিজের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্বিত তিনি ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার বেলভুজ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শামছুন নাহার বেগম। বাবা আলী মিয়া ও মা হায়াতুনেচ্ছার প্রথম কন্যা সন্তান। ছয়ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। তাঁর বাবা বরুড়া বাজারে ব্যবসা করতেন। পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। তখন সবাই মেয়েকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় শামছুন নাহার বেগম পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছেন। ১৯৬৮ সালে কাদবা তলগ্রাম তরিণী চরণ লাহা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক এবং ১৯৭০ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৩ সালে কাদবা তলগ্রাম তরিণী চরণ লাহা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাজী আবু তাহেরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর বিদ্যালয়ের আবাসিক কোয়াটাওে থাকতেন। এরপর তিনি দুই বছর বরুড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি) শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৬ সালে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে সরকারি চাকরি পান। পরে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৮০ সালে বরুড়া শহীদস্মৃতি সরকারি কলেজের পশ্চিম পাশে জায়গা কেনেন। এক পর্যায়ে তাঁর স্বামী শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যবসায় মনোযোগী হন। ১৯৮৮ সালের দিকে তাঁর স্বামী কাজী আবু তাহেরের ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ২৬ জুলাই তিনি মারা যান। ২০০৪ সালে শামছুন নাহার বেগম চাকরি থেকে অবসরে যান।
শামছুন নাহার বেগম বলেন, ' স্বামীর মৃত্যুর পর চারদিকে ঘোর অন্ধকার দেখছি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। তখন মন কে শক্ত করলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে করেই হোক সন্তানদের পড়াশোনা করে মানুষ করব। পরিবার ও নানাজনের নানা কথার মধ্য দিয়ে সামান্য বেতনের চাকরির টাকা দিয়ে পথচলা শুরু আমার। একদিকে চাকরি, অন্যদিকে রান্না করা। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো, সবসময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কাজ কওে সন্তানদের পড়াশোনা তদারকি করা সবই একাই সামলাতে হয়েছে। তার উপর আলাদা বাড়িতে থাকছি, নানা ধরনের দুশ্চিন্তায়ও তখন ভয় করতো। এক পর্যায়ে বড় ছেলে সাব্বির (কাজী আশরাফ সিদ্দিকী) বিএ পাস করে একদিন বলল, 'মা আমি ব্যবসা করতে চাই। আপনি আর কতো টানবেন। ছোট দুভাই বোন কে মানুষ করতে হবে। এরপর সাব্বির ব্যবসায় হাল ধরল। আমাকে বড় ছেলে সর্বাত্নক সহযোগিতা করল। আমার নজরদারির কারণে একমাত্র মেয়ে শিরিন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেল। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্কসসহ উত্তীর্ণ হল। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে। ছোট ছেলে কাজী ওমর সিদ্দিকী পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেল। এসএসসিতে স্টার মার্কস প্রথম বিভাগ পেল । পরে রানা (কাজী ওমর সিদ্দিকী) নটরডেম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের বাকিংহামশায়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে মাস্টার্স করে। পরবর্তীতে ওরা আরও ডিগ্রি নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এখন তাঁরা প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী।