সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মনিরুল হক চৌধুরী। প্রায় ছয় দশক ধরে তিনি রাজনীতিকে উপভোগ করছেন। সরকারি ও বিরোধী দলে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। সংসদ সদস্য না হয়েও এলাকার উন্নয়নে অহর্নিশ তৎপর। তাঁর জন্য এলাকার মানুষের অসম্ভব টান। রাজনীতির নানা ধরনের মারপ্যাঁচে তাঁকে যখন আটকানোর চেষ্টা করা হয়, তখন তিনি এলাকায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। বঞ্চিত কুমিল্লার উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ’। ওই সংগঠনের ব্যানারে জনগণের কাছাকাছি অবস্থান করেন। কৃষক, ব্যবসায়ী, মেহনতি মানুষ ও সমবায়ীদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। কারাগারে থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন। ৭৮ বছর বয়সী মনিরুল হক চৌধুরী এখনও সার্বক্ষণিক রাজনীতি নিয়েই মাঠে আছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য। তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ। গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত সুয়াগঞ্জ তফাজ্জল আহাম্মদ চৌধুরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ( সুয়াগাজী টি আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত) সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমার শহর পত্রিকার সম্পাদক গাজীউল হক সোহাগ।
আমার শহর: চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে আলোচনা আছে। আপনি কোন আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
মনিরুল হক চৌধুরী: কুমিল্লাকে বাঁচাতে হলে আমাকে সদর ( সিটি এলাকাসহ) আসন থেকে নির্বাচন করতে হবে। আমি সদর আসনের ভোটার। বাপ-দাদার আমল থেকেই এখানে ভোটার। আমার বাড়ি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে।
আমার শহর: কিন্তু আপনি তো সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলায় কাজ করছেন? আপনার সংসদীয় আসনও ওই এলাকায়?
মনিরুল হক চৌধুরী: আমি তিনটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইব। কুমিল্লার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও লালমাই এবং নাঙ্গলকোট। নাঙ্গলকোট আলাদা আসন হবে। সদর দক্ষিণ ও লালমাই মিলে একটি আসন হবে। আমি কোতোয়ালির লোক, সিটির লোক। দল কি সিদ্ধান্ত নেবে, এটা দলের ব্যাপার। দল আমাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দেয়, সেখানেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।
আমার শহর: আপনি তো রাজনীতিবিদ। গত কয়েক বছর ধরে আপনি কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ নামে একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠন কেন করেছেন? এটার কাজ কি?
মনিরুল হক চৌধুরী: সামাজিক দায়িত্ব থেকে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেছি। জন্মস্থানের প্রতি ঋণ শোধ করতে এই সংগঠন করা হয়। কুমিল্লার প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা, অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিকার, আল্লাহর কাছে যেন জবাব দিতে না হয়, সেজন্য আমার এই উদ্যোগ।
আমার শহর: কেটিসিসি নিয়ে আপনাকে মাঝখানে খুবই তৎপর হতে দেখা গেছে। এই বিষয়ে কিছু বলবেন?
মনিরুল হক চৌধুরী: ড. আখতার হামিদ খানের সৃষ্টি সমবায় আন্দোলন। কোতোয়ালির বড় সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কেটিসিসি। গত কয়েক বছরে কেটিসিসির সম্পদ লুণ্ঠন হওয়ায় আমি প্রতিবাদ করেছি। কেটিসিসিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে। গত ১৫ বছরে কোন ধরনের নির্বাচন না করে ভাড়াটিয়া সমিতি বানিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে এর সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সমবায়ীদের নীতি নৈতিকতা সবকিছু ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে। লুণ্ঠনের টাকা থেকে ৫-১৫ হাজার টাকায় ভোট কিনে নির্বাচনে পকেট কমিটি বানানো হয়েছে। ভুয়া সমবায় সমিতি বানিয়ে আখতার হামিদ খানের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। ৭০ টির মতো প্রাথমিক সমিতি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আমি কোতোয়ালির সমবায়ীদের নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি।
আমার শহর: কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও তো আপনি তৎপর। এই আন্দোলনের ফল কি?
মনিরুল হক চৌধুরী: ইপিজেড তরল বর্জ্য পরিশোধন না করে আমাদের সিটি করপোরেশনের খালে ছেড়ে দেওয়ার কারণে আজ দক্ষিণ কুমিল্লা বর্জ্যাগারে পরিণত হয়েছে। বিনাভোটে নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতৃত্ব আপোস করেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অর্থের বিনিময়ে ইপিজেডের এই অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমার লড়াই অব্যাহত আছে।
আমার শহর: ওয়ান ইলেভেনের সময় আপনি বাখরাবাদ দ্বিখণ্ডিত করার বিরুদ্ধে অনশন করেছিলেন। সেই বাখরাবাদ তো কুমিল্লায় আছে।
মনিরুল হক চৌধুরী: তখন বাখরাবাদ দ্বিখণ্ডিতের নামে চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি খবর পেয়ে বলেছি, ডাইরেক্ট অনশনে বসব। অতীতে কুমিল্লা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কারাগারও চলে গেলে। আমার আন্দোলনের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে যুক্ত করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড আছে।
আমার শহর: কুমিল্লার সদর দক্ষিণ পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা আপনি। আপনার আমলে সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা হয়। পরে সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে কুমিল্লা পৌরসভার সঙ্গে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন করা হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সেবার মান কেমন?
মনিরুল হক চৌধুরী: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নাগরিক পরিষেবা শূন্যের কোঠায়। দুইটি পৌরসভা এক হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি। জনবল বাড়েনি। গিঞ্জি শহর হচ্ছে কুমিল্লা। অবৈধ পরিবহনের অত্যাচারে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। কুমিল্লা হারিয়েছে তার সকল ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এক সময় চাকরির প্রয়োজনে কুমিল্লায় যাঁরা বসবাস করেছেন, এমনকি তাঁদের সন্তানেরা যাঁরা এই শহরে ছিলেন তাঁরাও আজ কুমিল্লা নিয়ে চরম হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। তাঁরাই আমাকে বাধ্য করেছেন কুমিল্লার এই সামাজিক আন্দোলন করতে। কুমিল্লার এই সমস্যাগুলোকে জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত করতে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
আমার শহর: জেলার পর তো এখন দেখলাম মহানগর কমিটিও গঠন করেছেন?
মনিরুল হক চৌধুরী: গত ২০ মার্চ কুমিল্লা বাচাঁও মঞ্চের মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আইনজীবী কাজী নাজমুস সাদাত সাধনকে আহ্বায়ক ও নাসির উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লা মহানগর বাঁচলে, কুমিল্লা বাঁচবে। কুমিল্লা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
আমার শহর: এখন যে জাতীয় ঐক্যের আওয়াজ উঠেছে, আপনি দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কি বলে?
মনিরুল হক চৌধুরী: জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই এদেশে জাতীয় ঐক্যের সূত্রপাত। জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ ও জামায়াতকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন বাকশাল চেয়েছেন। জিয়া সেটি না করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে বলেছেন। যে কারণে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে ভাগ হয়ে নির্বাচন করে। আমিও মই মার্কা নিয়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর অংশ থেকে নির্বাচন করি। জাতীয় ঐক্য জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালেই করে দিয়েছেন। আজকে জাতীয় ঐক্যের যে আওয়াজ উঠেছে, সেটা জিয়ার আমলেই হয়। জিয়াউর রহমান তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তার কারণে তখন বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করে দেশকে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেন। এই সত্য কথা বলতে আমার এতোটুকুন দ্বিধা নেই।
আমার শহর: সরকার যে-ই দলই থাকুক না কেন, আপনি রাজনীতির মাঠে সবসময় তৎপর থাকেন । নানামুখী কাজ করেন। মানুষের কাজের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যান। চিঠিপত্র চালাচালি, ফোনে যোগাযোগ করেন। কর্মসূচির ডাক দেন। কীভাবে এতো কিছু সামলান?
মনিরুল হক চৌধুরী: ছাত্রজীবন থেকেই আমি রাজনীতি করি। ছাত্র হিসেবেও খারাপ ছিলাম না। বৃত্তি পেয়েছি। বিজ্ঞানের ছাত্র আমি। ব্রিটিশ আমলে আমার জন্ম, ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই। ১৯৬৩ সালে চৌয়ারা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করি। কলেজে পড়াকালীন থাকতাম টমছমব্রিজ নিউ হোস্টেলের ১৪ নম্বর কক্ষে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হই। তখন থেকেই ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। প্রায় ৬০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। একাত্তরে দেশ বাঁচাতে জীবনবাজি রেখে লড়েছি, এখনও মানুষের জন্য লড়ছি। পরিবারের সবাইর সহযোগিতা ও এলাকাবাসীর ভালোবাসায় এতটুকুন পথ পাড়ি দিচ্ছি।
আমার শহর: আপনাকে ধন্যবাদ।
মনিরুল হক চৌধুরী: আমার শহরের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মনিরুল হক চৌধুরী। প্রায় ছয় দশক ধরে তিনি রাজনীতিকে উপভোগ করছেন। সরকারি ও বিরোধী দলে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। সংসদ সদস্য না হয়েও এলাকার উন্নয়নে অহর্নিশ তৎপর। তাঁর জন্য এলাকার মানুষের অসম্ভব টান। রাজনীতির নানা ধরনের মারপ্যাঁচে তাঁকে যখন আটকানোর চেষ্টা করা হয়, তখন তিনি এলাকায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। বঞ্চিত কুমিল্লার উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ’। ওই সংগঠনের ব্যানারে জনগণের কাছাকাছি অবস্থান করেন। কৃষক, ব্যবসায়ী, মেহনতি মানুষ ও সমবায়ীদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। কারাগারে থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন। ৭৮ বছর বয়সী মনিরুল হক চৌধুরী এখনও সার্বক্ষণিক রাজনীতি নিয়েই মাঠে আছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য। তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ। গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত সুয়াগঞ্জ তফাজ্জল আহাম্মদ চৌধুরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ( সুয়াগাজী টি আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত) সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমার শহর পত্রিকার সম্পাদক গাজীউল হক সোহাগ।
আমার শহর: চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে আলোচনা আছে। আপনি কোন আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
মনিরুল হক চৌধুরী: কুমিল্লাকে বাঁচাতে হলে আমাকে সদর ( সিটি এলাকাসহ) আসন থেকে নির্বাচন করতে হবে। আমি সদর আসনের ভোটার। বাপ-দাদার আমল থেকেই এখানে ভোটার। আমার বাড়ি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে।
আমার শহর: কিন্তু আপনি তো সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলায় কাজ করছেন? আপনার সংসদীয় আসনও ওই এলাকায়?
মনিরুল হক চৌধুরী: আমি তিনটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইব। কুমিল্লার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও লালমাই এবং নাঙ্গলকোট। নাঙ্গলকোট আলাদা আসন হবে। সদর দক্ষিণ ও লালমাই মিলে একটি আসন হবে। আমি কোতোয়ালির লোক, সিটির লোক। দল কি সিদ্ধান্ত নেবে, এটা দলের ব্যাপার। দল আমাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দেয়, সেখানেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।
আমার শহর: আপনি তো রাজনীতিবিদ। গত কয়েক বছর ধরে আপনি কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ নামে একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠন কেন করেছেন? এটার কাজ কি?
মনিরুল হক চৌধুরী: সামাজিক দায়িত্ব থেকে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেছি। জন্মস্থানের প্রতি ঋণ শোধ করতে এই সংগঠন করা হয়। কুমিল্লার প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা, অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিকার, আল্লাহর কাছে যেন জবাব দিতে না হয়, সেজন্য আমার এই উদ্যোগ।
আমার শহর: কেটিসিসি নিয়ে আপনাকে মাঝখানে খুবই তৎপর হতে দেখা গেছে। এই বিষয়ে কিছু বলবেন?
মনিরুল হক চৌধুরী: ড. আখতার হামিদ খানের সৃষ্টি সমবায় আন্দোলন। কোতোয়ালির বড় সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কেটিসিসি। গত কয়েক বছরে কেটিসিসির সম্পদ লুণ্ঠন হওয়ায় আমি প্রতিবাদ করেছি। কেটিসিসিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে। গত ১৫ বছরে কোন ধরনের নির্বাচন না করে ভাড়াটিয়া সমিতি বানিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে এর সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সমবায়ীদের নীতি নৈতিকতা সবকিছু ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে। লুণ্ঠনের টাকা থেকে ৫-১৫ হাজার টাকায় ভোট কিনে নির্বাচনে পকেট কমিটি বানানো হয়েছে। ভুয়া সমবায় সমিতি বানিয়ে আখতার হামিদ খানের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। ৭০ টির মতো প্রাথমিক সমিতি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আমি কোতোয়ালির সমবায়ীদের নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি।
আমার শহর: কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও তো আপনি তৎপর। এই আন্দোলনের ফল কি?
মনিরুল হক চৌধুরী: ইপিজেড তরল বর্জ্য পরিশোধন না করে আমাদের সিটি করপোরেশনের খালে ছেড়ে দেওয়ার কারণে আজ দক্ষিণ কুমিল্লা বর্জ্যাগারে পরিণত হয়েছে। বিনাভোটে নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতৃত্ব আপোস করেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অর্থের বিনিময়ে ইপিজেডের এই অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমার লড়াই অব্যাহত আছে।
আমার শহর: ওয়ান ইলেভেনের সময় আপনি বাখরাবাদ দ্বিখণ্ডিত করার বিরুদ্ধে অনশন করেছিলেন। সেই বাখরাবাদ তো কুমিল্লায় আছে।
মনিরুল হক চৌধুরী: তখন বাখরাবাদ দ্বিখণ্ডিতের নামে চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি খবর পেয়ে বলেছি, ডাইরেক্ট অনশনে বসব। অতীতে কুমিল্লা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কারাগারও চলে গেলে। আমার আন্দোলনের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে যুক্ত করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড আছে।
আমার শহর: কুমিল্লার সদর দক্ষিণ পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা আপনি। আপনার আমলে সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা হয়। পরে সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে কুমিল্লা পৌরসভার সঙ্গে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন করা হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সেবার মান কেমন?
মনিরুল হক চৌধুরী: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নাগরিক পরিষেবা শূন্যের কোঠায়। দুইটি পৌরসভা এক হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি। জনবল বাড়েনি। গিঞ্জি শহর হচ্ছে কুমিল্লা। অবৈধ পরিবহনের অত্যাচারে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। কুমিল্লা হারিয়েছে তার সকল ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এক সময় চাকরির প্রয়োজনে কুমিল্লায় যাঁরা বসবাস করেছেন, এমনকি তাঁদের সন্তানেরা যাঁরা এই শহরে ছিলেন তাঁরাও আজ কুমিল্লা নিয়ে চরম হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। তাঁরাই আমাকে বাধ্য করেছেন কুমিল্লার এই সামাজিক আন্দোলন করতে। কুমিল্লার এই সমস্যাগুলোকে জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত করতে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
আমার শহর: জেলার পর তো এখন দেখলাম মহানগর কমিটিও গঠন করেছেন?
মনিরুল হক চৌধুরী: গত ২০ মার্চ কুমিল্লা বাচাঁও মঞ্চের মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আইনজীবী কাজী নাজমুস সাদাত সাধনকে আহ্বায়ক ও নাসির উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কুমিল্লা মহানগর বাঁচলে, কুমিল্লা বাঁচবে। কুমিল্লা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
আমার শহর: এখন যে জাতীয় ঐক্যের আওয়াজ উঠেছে, আপনি দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কি বলে?
মনিরুল হক চৌধুরী: জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই এদেশে জাতীয় ঐক্যের সূত্রপাত। জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ ও জামায়াতকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন বাকশাল চেয়েছেন। জিয়া সেটি না করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে বলেছেন। যে কারণে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে ভাগ হয়ে নির্বাচন করে। আমিও মই মার্কা নিয়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর অংশ থেকে নির্বাচন করি। জাতীয় ঐক্য জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালেই করে দিয়েছেন। আজকে জাতীয় ঐক্যের যে আওয়াজ উঠেছে, সেটা জিয়ার আমলেই হয়। জিয়াউর রহমান তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তার কারণে তখন বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করে দেশকে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেন। এই সত্য কথা বলতে আমার এতোটুকুন দ্বিধা নেই।
আমার শহর: সরকার যে-ই দলই থাকুক না কেন, আপনি রাজনীতির মাঠে সবসময় তৎপর থাকেন । নানামুখী কাজ করেন। মানুষের কাজের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যান। চিঠিপত্র চালাচালি, ফোনে যোগাযোগ করেন। কর্মসূচির ডাক দেন। কীভাবে এতো কিছু সামলান?
মনিরুল হক চৌধুরী: ছাত্রজীবন থেকেই আমি রাজনীতি করি। ছাত্র হিসেবেও খারাপ ছিলাম না। বৃত্তি পেয়েছি। বিজ্ঞানের ছাত্র আমি। ব্রিটিশ আমলে আমার জন্ম, ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই। ১৯৬৩ সালে চৌয়ারা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করি। কলেজে পড়াকালীন থাকতাম টমছমব্রিজ নিউ হোস্টেলের ১৪ নম্বর কক্ষে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হই। তখন থেকেই ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। প্রায় ৬০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। একাত্তরে দেশ বাঁচাতে জীবনবাজি রেখে লড়েছি, এখনও মানুষের জন্য লড়ছি। পরিবারের সবাইর সহযোগিতা ও এলাকাবাসীর ভালোবাসায় এতটুকুন পথ পাড়ি দিচ্ছি।
আমার শহর: আপনাকে ধন্যবাদ।
মনিরুল হক চৌধুরী: আমার শহরের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৪ ব্যাচের সাহিদা আক্তার।
০৮ মার্চ ২০২৫