ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন
ভূমিকা
মেডিকেল শিক্ষা একটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তি। একজন চিকিৎসকের জ্ঞান ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষের জীবন। তাই চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নত না হলে একটি জাতির স্বাস্থ্যখাত কখনোই উন্নত হতে পারে না। বর্তমান সময়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের মেডিকেল শিক্ষায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে এখনও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে — যেমন তত্ত্বভিত্তিক শিক্ষার আধিক্য, গবেষণার সুযোগের অভাব, প্রযুক্তির অপ্রতুল ব্যবহার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধান না করা হলে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় :
আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন
বর্তমান পাঠ্যক্রমে শুধুমাত্র তথ্য মুখস্থ করার প্রবণতা আছে। এর পরিবর্তে সমস্যা নির্ভর (চৎড়নষবস-ইধংবফ খবধৎহরহম) ও চর্চাভিত্তিক শিক্ষা (চৎধপঃরপব-ইধংবফ ঊফঁপধঃরড়হ) চালু করা দরকার। এতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ*
শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান, আধুনিক শিক্ষাদান কৌশল শেখানো এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। একটি ভালো শিক্ষকই একজন ভালো চিকিৎসকের ভিত্তি গড়ে দিতে পারেন।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহ
গবেষণা একটি দেশের মেডিকেল জ্ঞানের বিকাশে অন্যতম হাতিয়ার। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে হবে, এবং গবেষণার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা, উপযুক্ত পরিবেশ ও অভিজ্ঞ পরামর্শক প্রদান করতে হবে।
প্রযুক্তির প্রয়োগ
ডিজিটাল ল্যাব, ভার্চুয়াল সিমুলেশন, ই-লার্নিং এবং টেলিমেডিসিনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় ও বাস্তবসম্মত করা যায়। শিক্ষার্থীদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী করে তোলা জরুরি।
ব্যবহারিক ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব
কেবল ভালো ডাক্তার হলেই হবে না; হতে হবে একজন ভালো মানুষও। রোগীর সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ, পেশাগত নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধও চিকিৎসকদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মূল্যায়ন পদ্ধতির আধুনিকায়ন
বর্তমান লিখিত পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ওএসকিই (ঙনলবপঃরাব ঝঃৎঁপঃঁৎবফ ঈষরহরপধষ ঊীধসরহধঃরড়হ), ওএসপিই (ঙনলবপঃরাব ঝঃৎঁপঃঁৎবফ চৎধপঃরপধষ ঊীধসরহধঃরড়হ) ও কেস স্টাডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সম্যক মূল্যায়ন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আদান-প্রদান*
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
উপসংহার
একটি উন্নত জাতি গঠনের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা অপরিহার্য, আর উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো মানসম্মত মেডিকেল শিক্ষা। তাই মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ, দক্ষ শিক্ষক, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়। এখনই সময় এই খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের উপযুক্তভাবে গড়ে উঠা।
ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক (ফার্মাকোলজি), নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ।
ভূমিকা
মেডিকেল শিক্ষা একটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তি। একজন চিকিৎসকের জ্ঞান ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষের জীবন। তাই চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নত না হলে একটি জাতির স্বাস্থ্যখাত কখনোই উন্নত হতে পারে না। বর্তমান সময়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের মেডিকেল শিক্ষায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে এখনও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে — যেমন তত্ত্বভিত্তিক শিক্ষার আধিক্য, গবেষণার সুযোগের অভাব, প্রযুক্তির অপ্রতুল ব্যবহার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধান না করা হলে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় :
আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন
বর্তমান পাঠ্যক্রমে শুধুমাত্র তথ্য মুখস্থ করার প্রবণতা আছে। এর পরিবর্তে সমস্যা নির্ভর (চৎড়নষবস-ইধংবফ খবধৎহরহম) ও চর্চাভিত্তিক শিক্ষা (চৎধপঃরপব-ইধংবফ ঊফঁপধঃরড়হ) চালু করা দরকার। এতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ*
শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান, আধুনিক শিক্ষাদান কৌশল শেখানো এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। একটি ভালো শিক্ষকই একজন ভালো চিকিৎসকের ভিত্তি গড়ে দিতে পারেন।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহ
গবেষণা একটি দেশের মেডিকেল জ্ঞানের বিকাশে অন্যতম হাতিয়ার। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে হবে, এবং গবেষণার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা, উপযুক্ত পরিবেশ ও অভিজ্ঞ পরামর্শক প্রদান করতে হবে।
প্রযুক্তির প্রয়োগ
ডিজিটাল ল্যাব, ভার্চুয়াল সিমুলেশন, ই-লার্নিং এবং টেলিমেডিসিনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় ও বাস্তবসম্মত করা যায়। শিক্ষার্থীদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী করে তোলা জরুরি।
ব্যবহারিক ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব
কেবল ভালো ডাক্তার হলেই হবে না; হতে হবে একজন ভালো মানুষও। রোগীর সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ, পেশাগত নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধও চিকিৎসকদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মূল্যায়ন পদ্ধতির আধুনিকায়ন
বর্তমান লিখিত পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ওএসকিই (ঙনলবপঃরাব ঝঃৎঁপঃঁৎবফ ঈষরহরপধষ ঊীধসরহধঃরড়হ), ওএসপিই (ঙনলবপঃরাব ঝঃৎঁপঃঁৎবফ চৎধপঃরপধষ ঊীধসরহধঃরড়হ) ও কেস স্টাডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সম্যক মূল্যায়ন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আদান-প্রদান*
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
উপসংহার
একটি উন্নত জাতি গঠনের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা অপরিহার্য, আর উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হলো মানসম্মত মেডিকেল শিক্ষা। তাই মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ, দক্ষ শিক্ষক, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়। এখনই সময় এই খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের উপযুক্তভাবে গড়ে উঠা।
ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক (ফার্মাকোলজি), নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ।